নতুন রুপে বর্ষায় যৌবন ফিরে পেল চলনবিল

তাড়াস প্রতিনিধিঃ “কোথায় চলেছো? এ দিকে এসো না! দুটো কথা শোনা দিকি এই নাও- এই চকচকে ছোটো নতুন রুপোর সিকি ছোকানুর কাছে দুটো আনি আছে তোমারে দেবো গো তা-ও,আমাদের যদি তোমার সঙ্গে নৌকায় তুলে চলনবিল ঘুরাও,” এই কবিতাই স্মরণ করিয়ে দেয় গ্রামবাংলার বর্ষাকালের চিরায়ত অপরূপের কথা।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিল চলনবিল।পানি চলমান থাকায় এই বিলের নামকরণ হয়েছে চলনবিল। এখন বর্ষাকাল হওয়ায় চলনবিল ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ।প্রয়োজনের তাগিদেই ভাসমান মানুষগুলো ডিঙ্গি নৌকায় ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক।দ্বীপের মতো গ্রামগুলো যেন একেকটা ভাসমান বাজার। বর্ষায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া, গ্রাম থেকে শহর, স্কুল-কলেজ-হাটবাজারসহ যোগাযোগের সব জায়গায় ভাসমান মানুষগুলোর নিত্য সাথীই যেন ঐতিহ্যবাহী ডিঙ্গি নৌকা।
বর্ষা এলেই চারদিক অথৈই জলে ডুবে যায় মাঠ-ঘাট, রাস্তাসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা। আর তখনই দেখা যায় চলনবিলের ঐতিহ্য বাহারি সব ডিঙ্গি নৌকা। কোনটা চলছে পাল উড়িয়ে, কোনটা ঠেলা নৌকা, আবার কোনটা স্টিলের তৈরি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। কারণ চলনবিল এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট বর্ষা এলেই পানির নিচে ডুবে য়ায়। তখন ডিঙ্গি নৌকাই হয় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। জানা গেছে, নাটোর জেলার সিংড়া, গুরচদাসপুর, বড়াইগ্রাম, নওগাঁ জেলার রানীনগর, আত্রাই, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া এবং বগুড়া জেলার দক্ষিণাঞ্চল মিলে চলনবিলের অবস্থান। মোট ৮টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন এবং ৮টি পৌরসভা নিয়ে বর্তমানে চলনবিলের অবস্থান। চলনবিল অঞ্চলে রয়েছে ২১টি নদী ও ৯৩টি ছোট-বড় বিল।এখানে রয়েছে নানা শ্রেণির সুপেয় পানির মৎস্য সম্পদ। এখন এর মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।
নাটোরের গুরুদাসপুর চলনবিল জাদুঘরে গিয়ে দেখা যাবে বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতিক উপাদানগুলো প্রতিচ্ছবি। এখনো দেখতে পাওয়া যায় গহনার নৌকা, তালের ডোঙ্গা, কলাগাছের ভেলা (ভুরা), পানসী নৌকা, গরু ও মহিষের গাড়ি, পালকি ও ডুলি, ঘোড়া, সেঁউতি, জাঁতা, বাথান, খরম, হুকা, পাতকুয়া, তফিল এবং গাইজা, বাদ্যযন্ত্র, কলের গান, পলো, বিভিন্ন দেশের টাকা, মুদ্রা, তীর, ধনুকসহ বাহারি সব প্রাচীন তৈজসপত্র। এ ছাড়া চলনবিলের বুক চিরে নির্মিত হয়েছে মা জননী সেতু পাশেই রয়েছে স্বর্ণদীপ ও গ্রিনল্যান্ড নামে দুটি বিনোদন কেন্দ্র।যা চলনবিলকে করেছে আর্কষণীয়।
এ ছাড়া সিংড়া উপজেলায় রয়েছে বেদে পল্লী, ঘাঁসি দেওয়ানের মাজার, কবিরগঞ্জ পর্যটন কেন্দ্র (সিংড়া পয়েন্ট)। তাড়াশ উপজেলায় রয়েছে গোবিন্দ নাটমন্দির, বিলসারা বেহুলা লক্ষীন্দরের ক‚প, শাহ শরিফ জিন্দানী (র.) মাজার শরিফ। এ ছাড়া নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা, রানী ভবানীর বাড়ি, উত্তরা গণভবনসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থাপনা। চলনবিলের সৌন্দর্যকে আরো আর্কষিত করে বালিহাঁস, তিরমূল, বাটুলে, মুরগিহাঁস, খয়রা, মানিক জোড়, ডুটরা, চা-পাখি, লোহাড়াং, মেমারচ, বোতক, নলকাক, সাদা বক, কানা বক, ফেফি, ডাহুক, চখা, বকধেনু, ইচাবক, করা, কাছিচোরা, রাতচোরা, ভুবনচিলা, মাছরাঙা, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলো ঈদ আনন্দ একটু বাড়িয়ে নিতে চলনবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে এসে ভিড় করে একটু বিনোদনের জন্য। চলনবিলের মাঝ দিয়ে বয়েচলা রাস্তার দুপাশে বিশাল জলরাশি, যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ নৌকা, বাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের করে ছুটে আসেন চলনবিলকে এক নজর দেখার জন্য। অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজার হাজার বিনোদনপ্রেমী দর্শনার্থীর ভিড় চোখে পড়ার মতো।
« ডিজিটাল পেমেন্টের পাশাপাশি ভার্চুয়াল মুদ্রার দিকে মনোযোগী হতে হবে– আইসিটি প্রতিমন্ত্রী (পূর্বের খবর)