প্রধান মেনু

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস জানাতে হবে — স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

ঢাকা, ১১ চৈত্র (২৫ মার্চ): সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে সর্বপ্রথম ফার্মগেইট এলাকায় মুক্তিকামি ছাত্র জনতার ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়।

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ব্যারিকেড তৈরির ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ এবং জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আজ এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রী’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য প্রদান করেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ এবং এ কে আজাদ; চিত্রনায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ আলমগীর; তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক জিলু; ইউনিসেফ সুপারস্টার ও টিভি রিপোর্টার সুবহা সাফায়েত সিজদা প্রমুখ।

আলোচনায় সভায় বক্তারা ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড এর গৌরবময় ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেন এবং ফার্মগেইট ব্যারিকেডের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকার ফার্মগেইট এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।

আলোচনা সভার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড তৈরির ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের গৌরবের ইতিহাস। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর করা হয়েছে ইতিহাস বিকৃতি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক/স্মৃতিচিহ্নগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। এখন আমাদের নতুন প্রজন্মকে এ গৌরবের ইতিহাসগুলো জানাতে হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ততকালীন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে ছাত্র জনতা ব্যাকিকেড তৈরি করে একটি প্রশিক্ষিত সেনা বহরকে যেভাবে ২০ মিনিটের মতো ফার্মগেইটে আটকে রেখেছিলো তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্য অন্যতম স্থান দখল করে রাখবে।’

প্রধান আলোচক শাজাহান খান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছে। এটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে একটি গণহত্যা। বিশ্বের কাছ থেকে আমাদেরকে এ গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা বহরকে ব্যারিকেড দিয়ে ফার্মগেইট তথা তেজগাঁওবাসী এক বীরত্বের ইতিহাস রচনা করে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ফার্মগেইট প্রতিরোধের নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা তাঁর আহ্বানেই প্রতিটা আন্দোলন, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তিনিই ছিলেন আমাদের প্রেরণা। আমরা আজ স্বার্থক। নতুন প্রজন্মকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটুকু জানাতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইতিহাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ ফার্মগেইট এলাকা। সে রাতে (২৫ মার্চ, ১৯৭১) আমরা ছাত্র জনতা বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বহরকে প্রায় ২০ মিনিটের মতো আটকে রেখেছিলাম। আমরা গাছ কেটে, লোহার চাই দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম, ঢিল, পেট্রোল বোমা ছুঁড়েছিলাম। কিন্তু সেনা বহরটি ২০ মিনিটের বেশি আটকে রাখতে পারিনি। তারপরই এই বাহিনী ঢাকা শহরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। কিন্তু সেদিন না পারলেও নয় মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’