প্রধান মেনু

ধর্ষণের পরেও আতংকের  মূখে এতিম নবম শ্রেণীর ছাত্রী ও তার পরিবার

ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ ধর্ষনের পরেও আতংকের মূখে এতিম নবম শ্রেণীর ছাত্রী ও তার পরিবার, যে ব্যাক্তিই মেয়েটির পাশে এসে সাহায্যেরে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে তাকে পরতে হচ্ছে  প্রাননাশের হুমকীর মূখে। ভয় ও আতংক নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটি ও তার পরিবার।
তেমনি এক নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুর জেলার সালথার উপজেলার গট্রি ইউনিয়নে।গত ৫ এপ্রিল রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বেরিয়েছিল নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। সে সময় ওত পেতে থাকা মানুষরূপী দুই হিংস্র পশু মেয়েটিকে মুখ চেপে ধরে বাড়ির পাশের বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। ধর্ষণের চিত্র মোবাইলে ধারণ করে সেটা আবার ফেসবুকে প্রচার করে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সবার মনের মধ্যে একটি ক্ষোপের সৃষ্টি করেছেন।  এই ঘটনার ধর্ষক শাকিল ফকির নামে একজন কে গ্রেফতার করেছে সালথা থানার পুলিশ ।
এদিকে এ ঘটনার মামলা করার পর উল্টো ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, মামলা করার পরও তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। উল্টো তাদের বাড়ি ছাড়া করা ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন জড়িতদের স্বজনরা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু।
গত ২৭শে এপ্রিল শনিবার সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন ওই ছাত্রী।  ভিডিওতে সে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার সঙ্গে যে অন্যায় অত্যাচার হয়েছে, তার জন্য আমি কোর্টে মামলা করেছি। কিন্তু মামলা করার পর থেকে  আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এই ঘটনার কোন বিচার তো করে নাই। এখন তিনি আমাদের বাড়িতেই থাকতে দিচ্ছেন না। আমার ভাইকে বাড়ি ফিরতে দিচ্ছে না। আমার ভাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ সময় মেয়েটি আরও বলে, চেয়ারম্যান কোনো বিচার না করায় বিধায় আমি আপনার কাছে (ভিডিওধারণকারী)  বিচারের দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু যোগাযোগমাধ্যমে আপনার কাছে আমার উপর নির্যাতনের বিচার দাবি করায়, চেয়ারম্যান আমাদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। আমার ভাইকে মারার জন্য খুজে বেড়াচ্ছে।
 মাননীয়  প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আমার  বাবা নাই, আমার শক্ত কোন হাত ও নেই, এদের হাত থেকে কে আমাদের রক্ষা করবে, কে আমাদের ন্যায্য বিচার এনে দিবে। আমি আর আমার পরিবার  আত্মহত্যা  করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। আমি আমার পরিবার এই ঘটনার বিচার চাই, আমরা বাঁচতে চাই।
এদিকে এই ঘটনার নির্যাতিত মেয়েটি ও পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান একই গ্রামের সিরাজুল শেক তিনি বলেন,এই মেয়েটি হতদরিদ্র পরিবার মেয়ে। এই মেয়েটি যেন সঠিক বিচার পাই তার জন্য তাদের পাশে এসে আমি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেবার কারণে  (চেয়ারম্যান ও ধর্ষণে জড়িতদের স্বজনরা) আমাকে ঘরে থাকতে দিচ্ছে না।
আমি শেষ পর্যন্ত এই অসহায় মেয়েটি পাশে থাকতে পারবো কি না বলতে পাচ্ছি না।তার কারন ইতিমধ্যে  আমার  হাত-পা কেটে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু, তিনি গ্রামের তার লোকদের ঘোষণা দিয়েছে “সিরাজুলকে যেখানে পাবি তার হাত-পা কেটে ফেলবি।” ভয়ে আমি এখন পালিয়ে আছি।’ মেয়েটির বড়  ভাই বলেন,লাভলু চেয়ারম্যান ওতার লোকজন আমাদের কে ও খুঁজে চলছে এই ভয়তে আমি আমার পরিবার কে নিয়ে ১৫ যাবত পালিয়ে রয়েছি।
এদিকে অভিযোগের পুরো বিষয়টি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা হয়েছে। আমি নিজেও এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিচার দাবি করেছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য নয়। আমি ভুক্তভোগীর পরিবারকে কোনো হুমকি দেইনি, এমনকি সিরাজকেও মেরে ফেলার হুমকি দেইনি।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আমি ওই মেয়েটির বাড়িতে গ্রাম্য পুলিশ মোতায়েন করেছি। তারা আমার কাছে এসেছিল, আমি তাদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছি।’
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন ধর্ষণের ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় শাকিল ফকির নামের একজনকে গ্রেপ্তারের পর সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। পরে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত রিমান্ডের শুনানির তারিখ পরে ধার্য করার আদেশ দিয়ে শাকিলকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তবে হুমকি-ধমকির বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ ওসি পাননি বলে জানান দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘হুমকি-ধমকির কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। এই ঘটনার জানার পর জেলা প্রশাসক ও এসপি মহাদয় ঘটনাটি পরিদর্শন করেন।