ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর কাছাকাছি থেকেও ক্ষমতাচর্চায় আগ্রহী হননি—-বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী

ঢাকা, ২৬ বৈশাখ (৯ মে): বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বাংলাদেশের খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। যদিও বৈবাহিক সম্পর্ক বাদেই বাঙালি জাতির এক গর্বিত ও আলোকিত মানুষের নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন এই পরমাণু বিজ্ঞানী। ব্যক্তিজীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্ত এই বিজ্ঞানীর দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা হোসেন পুতুল। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়েও, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর কাছাকাছি থেকেও কোনোদিন তিনি ক্ষমতাচর্চায় আগ্রহী হননি। নিজের মেধা, শ্রম ও যোগ্যতায় তিনি ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠেছেন সত্যিকার আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী বলেন, তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। যে মানুষটি আমাকে এত পছন্দ করতেন তার শেষ যাত্রায় আমি রংপুর গিয়েছিলাম।
আজ ঢাকায় মোহাম্মদপুর টাউন হলে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগারে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোঃ শৌকত আকবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখ।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদশের্র প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন । ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হন তিনি।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সময়টা ১৯৬৭ সাল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ। ছয় দফা আন্দোলনের কারণে গোটা দেশে তখন বিরাজ করছে ভীতিকর পরিস্থিতি। এ রকম পরিস্থিতিতে ১৭ নভেম্বর পবিত্র শবেবরাতের রাতে বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের পছন্দের পাত্র, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেধাবী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা। বিয়ের পরদিন জেলগেটে ওয়াজেদ-হাসিনা নবদম্পতিকে দোয়া করেন বঙ্গবন্ধু। নতুন জামাইকে সে সময় তিনি একটি রোলেক্স ঘড়ি উপহার দেন। এই উপহার আজীবন সযত্নে রেখেছিলেন ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।
মন্ত্রী আরো বলেন, ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। ৪০ বছরের বিবাহিত জীবনে ড. এম এ ওয়াজেদের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি তার পরিবারের পাশে থেকে যে ধৈর্য, সাহস ও সেবার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, তা অসাধারণ।
নানক বলেন, প্রথিতযশা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বিশ্বমাঝে বাংলাদেশ বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার নিরলস পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছিলেন আমৃত্যু। তাঁর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয় ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ও তৎপরবর্তীকালের ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, আজকে যারা প্রতিনিয়ত সরকারের সমালোচনা করেন তাদের কাছে প্রশ্ন কোন সময়টা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল। আমি বলব তারা ভুল পথে আছে। লন্ডন থেকে নির্দেশনা নিয়ে চলা দলটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই থাকবে।