প্রধান মেনু

ঝিনাইদহে ভৈরব নদী দখল করে প্রভাবশালী ব্যক্তি তৈরি করেছে বড় পুকুর

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ০৯ডিসেম্বর ২০১৯ঃ ঐতিহ্যবাহী নদ-নদী গুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার যখন কোটি কোটি টাকা খরচ করে খনন কাজ করছে ঠিক তখনই ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বুড়ি ভৈরব নদীর মাঝে এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রায় ২ একর ৩৫ শতক নদী দখল করে তৈরি করেছে বড় পুকুর। এতে নদী খননের উদ্দেশ্য বাধা গ্রস্থ হবে। সেই সাথে পাল্টে গেছে নদী খননের ম্যাপ। অভিযোগ উঠেছে সিদ্দিকুর রহমান নামের ঐ ব্যক্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও নদী খননের ঠিকাদারের ম্যানেজারকে টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেছেন। আর সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেছেন তার পুকুর নিজস্ব জমিতেই রয়েছে।

স্থানীয় দুই গ্রাম মাসলিয়া ও হাসিলবাগের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন প্রভাবশালী হওয়ায় পানি উন্নয়ণ বোর্ড এই পুকুর এলাকায় খনন না করেই পাশে খনন শুরু করেছে। এ ঘটনায় মাসলিয়া গ্রাম বাসীর পক্ষে আব্দুল জান্নাত নামের এক ব্যক্তি পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ভুমি অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন। নদীর মধ্যে থেকে পুকুর উচ্ছেদের দাবিতে তারা মানববন্ধন কর্মসূচীও পালন করেছেন।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন ও বারবাজার ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বুড়ি ভৈরব নদী বয়ে গেছে। এই নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে খনন কাজ শুরু করছে। কিন্তু নদীর মাঝে মাসলিয়া মৌজা নং- ১৫৯ বর্তমানে ১৪৫ নং মৌজার ১০৩ নং খতিয়ান, দাগ নং ৫৯ এলাকায় নদীর জমিতে প্রায় ২.৩৫ শতক জমি দখল করে পুকুর তৈরি করেছে। বর্তমানে ঐ নদীতে খনন কার্যক্রম চলছে। কিন্তু ঠিকাদারের ম্যানেজার ও পানি উন্নয়নবোর্ডের যোগসাজসে হাজী সিদ্দিকুর রহমান একটি পুকুর বানিয়েছেন। তার পুকুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অল্প কিছু খনন করে নদীর পথকে বা ম্যাপকেই পরিবর্তন করে দিয়েছে। পাশ থেকে অনেক বেশি খনন করলেও সেখানে খনন করা হয়নি।

ইতিমধ্যে ওই জমির পাড়ে পানি উন্নয়ণ বোর্ড গাছ লাগিয়ে গেছে। মাসলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, সম্পুর্ণ অবৈধ ভাবে নদীর জায়গা দখল করে সিদ্দিকুর রহমান পুকুর তৈরি করেছেন। বিষয়টি অভিযোগ আকারে পানি উন্নয়নবোর্ডে ও ঠিকাদারকে জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। লিখিত অভিযোগকারী আব্দুল জান্নাত জানান, তাদের ব্যক্তিগত জমির মধ্যে দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার নদী খনন করলেও সিদ্দিকুর রহমানের পুকুরে পাড় তারা বেঁধে দিয়েছে। আমরা গ্রামবাসী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।

হাসিলবাগ গ্রামের আবু বক্কার জানান, তাদের প্রায় ৩৫ শতক ফসলি জমি নদীর মধ্যে খনন করে নিয়েছে। কিন্তু পাশের হাজী সিদ্দিকের প্রায় ২.৩৫ একর জমি পানি উন্নয়ণ বোর্ড হাত না দিয়ে বরং খনন করে দিয়েছে। মাসলিয়া গ্রামের লাভলু রহমান জানান, বুড়ি ভৈরব নদীর মধ্যেই এই পুকুর নির্মান করেছেন হাজী সিদ্দিকুর রহমান। আমরা চাই পুরো নদী খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক। আর এই পুকুরের জন্য নদীর স্রোত ও গতি বাধাগ্রস্থত হবে। তিনি অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়নবোর্ডের ঠিকাদারের ম্যানেজার ও কিছু কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে এই স্থানে নদী দখল করে পুকুর করা হয়েছে। এখানে খননের দাবি জানান।

অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিনি নিজের জমিতে এই পুকুর করেছেন। নদীর পাশের জমিতে তার পুকুর। তার জমির পাশ দিয়ে নদীর ম্যাপে বাঁকা আছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমি জানিয়েছি এর প্রেক্ষিতে তারা তার পুকুরের পাশ থেকে কিছু অংশ খনন করে মাটি তার পুকুর পাড়ে দিয়েছে। আমি পরে শ্রমিক নিয়ে এই পুকুর পাড় বেঁধে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমি যদি কাউকে ম্যানেজ করে এই কাজটি করতে পারি তাহলে জনগনের কি?. আমার ক্ষমতা আছে আমি করেছি। কেউ পারলে এই পুকুর উচ্ছেদ করে দেখাক। হাজী সিদ্দিকুর রহমান জানান, গ্রামের কিছু ব্যক্তি আমার কাছ থেকে টাকা নেবার জন্য আমার বিরুদ্ধে এভাবে অভিযোগ দিচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারের ম্যানেজার ইউনুচ আলী জানান, আমরা নদীর ম্যাপ অনুযায়ী খনন করেছি। খনন কাজ এখন চলছে। কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। যে পুকুরের কথা বলা হচ্ছে ওই পুকুরের মালিক আমাদের কাগজপত্র দেখিছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা জানান, আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।