ঝিনাইদহে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর খনন, জেলা প্রশাসন নিরব!

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ০৯মার্চ ২০২০ঃ জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করেই পুকুর খনন করা হচ্ছে ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলা জুড়ে। বিশেষ করে শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু,ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ও কোটচাঁদপুর এলাকায় ধানী, বাস্ত, বাগান ও ডোবা জমিতে পুকুর খনন করে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হচ্ছে। সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস জমির শ্রেণীর পরিবর্তন রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠেছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চলছে। এ ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে যথেচ্ছা এই পুকুর খনন রোধ করা গেলেও তা করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসি অভিযোগ দিলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পুকুর খনন সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তারপর সবার ম্যানেজ করে আবার চলে পুকুর খননের কাজ।
এদিকে আইনের তোয়াক্কা না করে নারায়নকান্দি গ্রামের বেলেমাঠসহ হরিণাকুন্ডুর চাঁদপুর, শাখারীদহ, ভালকী, শিতলী,পায়রাডাঙ্গা, নারায়নকান্দি, সাহেবনগর ও পারমথুরাপুর গ্রামে ফসলী জমির মাঠে খনন করা হয়েছে গভীর পুকুর। এতে ভূমি ধ্বসের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। খনন করা পুকুরের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারাও রয়েছেন ভূমি ধ্বস আতঙ্কে। গত এক মাস ধরে জেলার হরিণাকুন্ডুু উপজেলার পারমথুরাপুর গ্রামের মৃত হয়বাত বিশ্বাসের ছেলে জাহাঙ্গীর তিন বিঘা জমির উপর খনন করেছেন বিশাল গভীর পুকুর। এছাড়া নারায়নকান্দি গ্রামের আক্তার মেম্বর ত্রিশ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করেছেন। ক্যানেল কেটে বছরের পর বছর ধরে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে-ফসলী জমির টপ সোয়েল বিক্রয় করে দেওয়া হচ্ছে। ফসলী জমিতে পুকুর কাটা যাবে না এমন আইনী নির্দেশনা থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। পুকুর সংলগ্ন বাসিন্দা আনিছুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, মুনতাজ আলী, বাছের আলী, আশাদুল ও আব্দুল বারী জানান, গায়ের জোরে আক্তার মেম্বর ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভেকু মেশিন দিয়ে বালি এবং মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আমরা বাধা নিষেধ করেও ঠেকাতে পারছি না। হরিণাকুন্ডু উপজেলার নারায়নকান্দি গ্রামের শাহারিয়ার বলেন, গ্রামের বেলেমাঠে ২০বছর ধরে পুকুর খনন করে বালি বিক্রয় হচ্ছে।দ্রুতসময়ের মধ্যে বালি উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে বেলেমাঠটিতে আর আবাদি জমি থাকবে না।বালিতোলার কারনে কয়েক বছর ধরে ভারী বর্ষণে সব জমি ধ্বসে পুকুরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।গ্রামের বেলেমাঠটি একসময় পুকুওে পরিনত হবে।
এ ব্যাপারে ৮নং চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, কেউ অভিযোগ করলে আমি ব্যবস্থা নেব। হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিজা সুলতানা বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু লোক তিন ফসলি আবাদি জমিকে নিচু ও জলাভূমি দেখিয়ে পুকুর খনন করছে। আবার এক শ্রেণীর লোক জমি লিজ নিয়ে বা কিনে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। ফসলের মাঠে পুকুর খনন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। এভাবে পুকুর কেটে মাটি বা বালি বিক্রি করা আইনত অপরাধ। তিনি এলাকার ভুক্তভোগীদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দেন।
শৈলকুপার আলমগীর হোসেন জানান, প্রশাসনের অনুমতি বা শ্রেণী পরিবর্তন না করেই বেশির ভাগ পুকুর খনন করা হচ্ছে। একটি চক্র সাধারণ কৃষককে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করছে। খনন করার কারণে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাস্তুসংস্থানে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। পুকুর খননে বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে শৈলকুপা উপজেলার আড়–য়াকান্দি গ্রামের কৃষক নজরুল বিশ্বাস বলেন, মাঠের মধ্যখানে পুকুর খনন করলে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ওইসব জমিতে ফসল আবাদ করা যায় না।
পুকুর খননে একপক্ষ লাভবান হলেও আমরা সাধারণ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। নারায়নকান্দি গ্রামের বেলেমাঠে বালি উত্তোলনকারি অভিযুক্ত আক্তার মেম্বর, জাহাঙ্গীর হোসেন এবং তার ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের মোবাইলে এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন,সবাইকে ম্যানেজ করেই বালি উত্তোলন করছি।বেলেমাঠে ভাল ফসল হয়না বিধায় এখানকার জমি অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছে।ফসল ভালো না হবার জন্যই পুকুর কেটে আমরা বালির ব্যবসা করছি।