ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুতে যুবককে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনকারী আওয়ামীলীগ নেতাসহ ২ জন গ্রেফতার
শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস থেকে টিভি চুরির অপবাদে গাছে বেধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রানা নামের এক যুবককে বেদম মারধর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনুর রহমান তুহিনসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
নির্যাতনকারী শাহিনুর রহমান তুহিন তাহেরহুদা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান একটি গ্রুপের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। এলাকাবাসী জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) হরিণাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় থেকে একটি টেলিভিশন চুরি হয়। পরদিন সকালে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান তুহিন গ্রামের কৃষক ওমর আলীর ছেলে রানাকে চোর সন্দেহে মাঠ থেকে ধরে আনে।
পরে শ্রীপুর বাজারের একটি কাঁঠাল গাছে হাত পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেদম মারধর করেন। পরে তাকে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করেন। পুলিশ হরিণাকুন্ডু থানায় এনে তাকে নিয়ে টিভি উদ্ধারে গেলেও টিভি উদ্ধার করতে পারেনি। পরে পুলিশ রানাকে তার পরিবারের জিম্মায় ফেরত দেয়। রানা গুরুতর অসুস্ত হয়ে গেলে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) সকালে ওই নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তাহেরহুদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজের আলী জানান, ভোটের দুই দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে মাঠে কাজ করছিল রানা। এসময় শাহিনুর রহমান তুহিন নামের এই আওয়ামী লীগ নেতা টেলিভিশন চুরির অভিযোগে রানাকে ধরে নিয়ে আসে। এরপর গ্রামের একটি গাছে ঝুলিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করে। ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শৈলকুপা সার্কেল) তারেক আল মেহেদী জানান, হরিণাকুন্ডু উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে টিভি চুরির অপবাদ দিয়ে যুবক রানাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পিতা ওমর আলী বাদী হয়ে হরিণাকুন্ডু থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
মামলা দায়েরের পর আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনুর রহমান তুহিন ও কাজী বাবলুকে গ্রেফতার করা হয়। হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, ভোটের কয়েকদিন আগে স্থানীয় আওয়াম লীগ নেতা তুহিন রানা নামের এই ব্যাক্তিকে ধরে থানায় এনেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অফিস থেকে টেলিভিশন চুরি করেছে। সে সময় আমরা তাকে টেলিভিশন উদ্ধারের জন্য চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় তাকে ফেরত দেওয়া হয়। এরপর কি হয়েছে আমার জানা ছিল না। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।রানার পিতা ওমর আলী জানান, আমার ছেলে কোন চুরির সাথে জড়িত না। তাকে অন্যায় ভাবে মারা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।