ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা বাসির নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলায় পুলিশের সাথে মতবিনিময়
শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ০২ মে ২০১৯ঃ ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নে পুলিশের সাথে জনগনের নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা বাজায় রাখার জন্য নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১১টায় শুরু হওয়া উন্মুক্ত আলোচনা সভায় জনসম্মুখ ইউনিয়নে হামলা ও চাঁদাবাজীর nভয়ে ঘরছাড়া মানুষের ঘরে ফেরার আকুতিসহ আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।এ সময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া মনোযোগ দিয়ে ইউনিয়নের ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন এবং আমলে নেন।
গত ১৬ মার্চ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান কবির হোসেনের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। গড়িয়ালা গ্রামের ঝন্টুর নেতৃত্বে তাদের চারটি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে দেয় তবে সেই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
নলডাঙ্গা ইউনিয়নের এই জনপদটি সবসময়ে উত্তপ্ত থাকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলের কারনে। বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে এই জনপদের মানুষগুলো ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠিতে বিভক্ত হওয়ার কারনে সামাজিক দ্বন্দ প্রকট রুপ ধারন করেছে। নির্বাচনের পর থেকে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বাগুটিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখনও পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারেনি এমনটি অভিযোগ করা হয় পুলিশের নিকট।
বাগুটিয়া গ্রামের মুনসুর মন্ডলের ছেলে আলমগীর বলেন, এক বছর আমি বাড়ি ছাড়া আমার গ্রামের তুহিন, লিমন, চান্দা, রিংকু আমাকে বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা। কুবাদ আলীর ছেলে মিন্টু জানান, আমি মুরগী ব্যবসায়ী আমার জমিতে পানি দিতে পারিনি এমনকি আমাকে ধান কাটতে দেওয়া হচ্ছেনা, লিয়াকত দফাদারের ছেলে লতিফ জানান, চাদা না দিয়ে আমি গ্রামে যেতে পারব না। এ ছাড়া, কালু, মুক্তার বিশ্বাস, কুবাদ আলী মন্ডল, তাপু বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া রিংকু, লিমন, চান্দা, ডলার,আরজু, রহমত, তুহিন এরা আমাদের বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করে জানান, আমি এই ইউনিয়নে প্রায় তিন বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু একটি মহল এই ইউনিয়নের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড ও আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে ইউনিয়নের সহজ সরল মানুষদেরকে ভূল বুঝিয়ে দুটি গ্রুপে পরিনত করেছে। এরাই প্রতিনিয়ত আমার দলের লোক এবং আমার চাচা ইরফান বিশাসকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্ঠায় লিপ্ত আছে। জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনের পরে তাদের হিংস্ধসঢ়;শ্রতা প্রকট আকার ধারন করেছে ।
প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন সময় আমার লোকদের মারধরসহ চাঁদা দাবি করে আসছে। এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় আমার এবং আমার চাচার নামে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাংবাদিকদের নিকট ভূল তথ্য পরিবেশন করেছে । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ফেক আইডির ফেসবুক থেকে এমন এমন আপত্তিকর কথা লেখা হয়েছে যাহা আমার এবং আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিপক্ষের গুটি কয়েকজন লোক দলীয় পরিচয়ে সারা ইউনিয়নে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মারামারি সহ বিভিন্ন রকম অসামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। প্রতিপক্ষ মোলা খানের গ্রুপের নেতৃত্বে রিংকু, লিমন, চান্দা ও ঝন্টু, পিকুলসহ আরো অনেকে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত আছে। মোলা গ্রুপ এলাকার কারও তোয়াক্কায় করছে না। এই গ্রুপ এলাকার অনেক সাধারন মানষুকে ভয় ভিতি দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগও করেন উপস্থিত পুলিশ কর্মকতর্েিদর নিকট।
খাঁন গ্রুপের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়া বাগুটিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ, কুবাদ আলী মন্ডল, মিন্টু, আলমগীর, তাপুসহ অনেকে তারা বাড়ি ফিরে যাবার জন্য পুলিশ সুপারের সাহায্য কামনা করেন ।নলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগে বলেন ,কিছু দিন আগে সন্ত্রাসী ঝন্টুর নেতৃত্বে ৭/৮ জনের একটি গ্রুপ হঠাৎ ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করে সেখানে রক্ষিত ৪টা মটরসাইকেল ভেঙে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করে পালিয়ে যায়।
এই সন্ত্রাসী গ্রুপটি আওয়ামীলীগের কোন দলীয় লোক না বলে জানান নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইরফান বিশ্বাস। তিনি আরো জানান মোলা খাঁ এলাকায় আসার পর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়ে গিয়াছে ।এলাকার নির্যাতিত মানুষ এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইরফান বিশ্বাস উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের জ্ঞ্যাথার্থে বলেন, গড়িয়ালা গ্রামের ঝন্টু নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদে হামলা করা হয়। অপরিচিত নাম্বার থেকে আড়মুখী গ্রামের মুলা খান আমাকে ফোন করে বলে তুই নলডাঙ্গা আই তোকে জবাই করব এছাড়া বাগুটিয়া গ্রামের রিংকু, লিমন, তুহিন ছাড়া আরো অনেকে আমাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করছে বলে জানান।
কয়েকটি গ্রামের নিরিহ মানুষদেরকে গ্রামে ফিরে যেতে দিচ্ছে না। আমিও সঠিক ভাবে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কাজ করতে পারছি না। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সদর থানা যুবলীগের সদস্য লিমন বিশ্বাস বলেন, আমরা কাউকে কোন বাধা প্রদান করছি না ইউনিয়নের মানুষ শান্তিতে আছে।ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নির্যাতিত মানুষের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বলেন, আপনারা ঘরে ফিরে গিয়ে সংসারের কাজকর্ম করেন ,পরবর্তিতে আর কোন সমস্যা হলে ঝিনাইদহের পুলিশ বিভাগকে আপনারা পাশে পাবেন । আপনারা নির্ভয়ে বাড়ি ফিরে যান। সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই,তারা জতবড় ক্ষমতাধর লোকই হোন না কেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমান সরকার সকল সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিপরীতে অবস্থান কেউ দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে রেহায় পাবেনা।
সন্ত্রাসীর কোন দল নেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে বাঁচার কোন সুযোগ নেই। আপনাদের উপর যদি কোন অন্যায় অত্যাচার হয় তাহলে পুলিশকে জানাবেন পুলিশ অবশ্যই আপনাদের পাশে থাকবে। কেউ আইনের উধ্বে নয়, অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। আপনারা নিশ্চিন্তে বসবাস করুন পুলিশ আপনাদের নিরাপত্তা দিবে।
নলডাঙ্গা ইউনিয়নে উন্মুক্ত আলোচনা সভায় পুলিশ বিভাগের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সদর সার্কেল কনক কুমার দাস, সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান খান, এস আই রবি শংকন ,ক্যাম্পের আইসি আনোয়ার হোসেন, সদর থানা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক অহিদুজ্জামান খোকন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ইরফান বিশ্বাস, ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবু জাফরসহ ইউনিয়ন আ’লীগের বিভিন্ন গ্রামের নেতৃবৃন্দ ও নলডাঙ্গা ইউনিয়নের জনতার একাংশ।