প্রধান মেনু

ঝিনাইদহের নলডাঙ্গার চেউনিয়ায় রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির ও ঠিকাদার কর্তৃক গ্রামবাসীদের মারধরের অভিযোগ

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ২৭মে ২০১৮ঃ  ঝিনাইদহ সদরের নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চৈউনিয়া গ্রামের রাস্তার কাজ দেখে এটাকে পুকুর চুরির মতো ঘটনা বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, গ্রামবাসীর প্রতিবাদে ঐ রাস্তার নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারের ব্যাপক অনিয়ম করার কারনে রোলার করা রাস্তায় ৩ নং ইটের খোয়া ও বালুর পরিবর্তে মাটি দেওয়ার কারনে একটু বৃষ্টি হলেই খোয়া গলে গিয়ে লাল কাদায় পরিনত হচ্ছে নতুন তৈরী করা রাস্তা। হাত দিয়ে জোরে চাপ দিলে রাস্তার ভিতর হাত ঢুকে যাচ্ছে। ঝিনাইদহের এলজিইডি অফিসের বিশেষ কমিশনের কারনে কাজের কোন তদারকি করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। ফলে জন সাধারনের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে রীতি মতো ঠিকাদার আসাদ ঝিনাইদহ থেকে মাইক্রো ও মটর সাইকেলে করে মাস্তান এনে এলাকাবাসীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে মারধর শুরু করে। এতে একাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে বাঁচার তাগিদে পুরুষেরা লাঠি ও মহিলারা ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করলে বেড়তিক দেখে ঠিকাদার আসাদ মাস্তান বাহিনী নিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। ঠিকাদার আসাদ এতে আরো ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সে প্রতিশোধ নিতে ঐ দিনই ঝিনাইদহ সদর থানায় চেউনিয়া গ্রামের সাধারন নিরিহ গ্রামবাসীর নামে সাব কন্ট্রাকটর দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে যে, কাজে বাঁধা সৃষ্টি এবং চাঁদা দাবী করছে এলাকার কিছু লোক। এ অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার রাতে সদর থানা থেকে দারোগা শামছুল ইসলাম ফোর্সসহ চেউনিয়া গ্রামে এসে ঐ গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে নিরিহ কাঁঠ মিস্ত্রি আছাদ (২৫) নামে এক যুবককে থানায় ধরে নিয়ে যায়। অনেকেই বলেন, সরকার টাকা ঠিকই বরাদ্ধ দেন, মাঝ পথে রাঘব বোয়ালরা মিলে লুটপাট শুরু করে।

অনুরুপ ঘটনা ঘটেছে ১৭ নং নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেউনিয়া গ্রামে। স্থানীয়রা জানায়, আমাদের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার নিরলস পরিশ্রম করে এই অবহেলিত এলাকার উন্নয়নের জন্য গত-১৯/১২/২০১৭ সাল তারিখে নলডাঙ্গা ইউপি হেড কোয়াটার থেকে সালাভরা বাজার রাস্তা উন্নয়নের কাজ উদ্বোধন করেন। এলাকাবাসী আরো জানায়, দীর্ঘদিনের অবহেলিত চেউনিয়া গ্রামের গুরুপদর বাড়ী টু ডাক্তার রঞ্জনের বাড়ি পর্যন্ত মোট-১২৬৪ মিটার রাস্তার কাজের চুক্তিমূল্য ৬২,৯৭,৩৪৭/=(বাষট্টি লক্ষ, সাতানব্বই হাজার, তিনশত, সাত চল্লিশ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার আগেই অনেক স্থানে দেবে যেয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয় এ সব দেখার যেন কেউ নেই। জানা যায়, এই রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্প্রতি ঝিনাইদহ এলজিইডির মাধ্যমে শুরু হয়। এতে বরাদ্ধ করা ৬২,৯৭,৩৪৭/=(বাষট্টি লক্ষ, সাতানব্বই হাজার, তিনশত, সাত চল্লিশ টাকা। ঝিনাইদহের আসাদ নামের এক ঠিকাদার কাজের দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে সড়কের কাজে এক নম্বর ইটের খোয়ার পরিবর্তে নিম্ন মানের ইটের খোয়া, সুরকি, ইট ভাটার ছাই ও বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

ফলে ২/৩ দিনের মাথায় সকল খোয়া গলে গিয়ে রাস্তায় কাঁদা হয়ে যাচ্ছে। মানুষে হাত দিয়ে টান দিলে এসব খোয় আর কাঁদা মাটি সহজেই উঠে যাবে। কোন কোন যায়গায় নরম খোয়া ও কাদা মাটির উপরে রোলার করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, তারা রাস্তার কাজে অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি এলজিইডির ঝিনাইদহ অফিসের ইঞ্জিনিয়ারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও ফোন রিসিব করেন না। বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। ঐ গ্রামের টিপু কাজী নামে এক ব্যক্তি জানান, এই দূর্নীতির সাথে ঝিনাইদহের এলজিইডির কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন।

ঠিকাদারের মিথ্যা অভিযোগ কর্তৃক ঐ গ্রামের কাঁঠ মিস্ত্রি আছাদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানান, রাস্তার নির্মান কাজে বাঁধা দেওয়ায় অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। আছাদসহ অনেকেই বাঁধা দিয়াছে নিন্ম মানের উপাদান দিয়ে রাস্তা করার কারনে এ কথা বললে তিনি বলেন নির্মাণ কাজে বাঁধা দেওয়া যাবে না কাজের মান খারাপ হলে এলজিইডি অফিসে লিখিত অভিযোগ করলে ইঞ্জিনিয়ার কাজ বন্ধ করে দিতো গ্রামবাসীর বাঁধা দেওয়ার দরকার কি ? ইঞ্জিনিয়ারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর যদি সে কোন ব্যবস্থা না নেয় তখন আমার কাছে অভিযোগ করতে পারতো। আমি ব্যবস্থা নিতাম। এখন আমি উভয়পক্ষকে ডেকেছি আশা করা যায় মিমাংসা হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী আব্দুল মালেকের সাথে ০১৭০৮১২৩২০৩ নম্বরে বার বার ফোন করলে কখনও কেটে দেওয়া হয় আবার কখনও ওয়েটিং দেখায়। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ফোন করলেও কোন ফলাফল আসেনি। এ ব্যাপারে ঠিকাদার আসাদের সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে এলজিইডি যে কাজ করে তা অবশ্যই মান সম্মত কাজ। তা না হলে বিল হয় কিভাবে? এ কাজ খারাপ হয়নি রাস্তার মাটি বৃষ্টিতে কাঁদা হয়ে রাস্তার উপর পড়ে ও রকম দেখা যাচ্ছে। আর একটু অধটু খারাপ হওয়ার কারন একেক ভাটার ইট একেক রকম হয় এ জন্য এমন হতে পারে। মারধরের কথা জিজ্ঞাসা করেলে ঠিকাদার আসাদ বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। যে ছেলেটাকে থানায় ধরে আনছিল ঐ ছেলেটা আমার মিস্ত্রির মারধর করছিল সে আমার সাব-কন্ট্রাকটরের কাজ করে। সে থানায় অভিযোগ করছিল তাই পুলিশ তাকে আটক করছিল। পরে এমপি সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে তাকে আমি আমার গাড়িতে করে পৌছে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদরের ১৭ নং নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, আমি ঐ রাস্তার কাজ দেখেছি খুবই নিন্ম মানের উপাদান দিয়ে কাজ করছে। যে ভাবে রাস্তাটির কাজ হচ্ছে এভাবে রাস্তার কাজ করলে রাস্তা আগামী ৩ মাসের মধ্যে ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মুশকিল হয়ে যাবে। রাস্তায় নিন্ম মানের ইটের খোয়া এবং বালির পরিবর্তে মাটি ও ভাটার ছাই দিয়ে রাস্তার কাজ করার কারনে গ্রামবাসী বাঁধা দেয়। আর ঐ ঠিকাদার গ্রাম বাসীর সাথে যে আচারন করেছে আমি তার জন্য নিন্দা জানায়। এ সমস্যা সমাধানে এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য, ঝিনাইদহ জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক সহ সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।