জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানসমূহের ভাসানচরে সম্পৃক্তকরণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ঢাকা, ২৪ আশ্বিন (৯ অক্টোবর) : জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানসমূহের ভাসানচরে সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সাথে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR)-এর সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে UNHCR এর বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি Johannes van der Klaauw MoU-তে স্বাক্ষর করেন। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান প্রধান অতিথি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী- জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ কর্তৃক কক্সবাজারের ন্যায় ভাসানচরেও মানবিক সহায়তা পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ সরকার ও UNHCR-এর যৌথ উদ্যোগে এফডিএমএন (FDMN-Forcibly Displaced Myanmar National)দের খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমার কারিকুলাম ও ভাষায় এফডিএমএনদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ সরকার এখানে বসবাসরত এফডিএমএন ও কর্মরত জাতিসংঘ এবং এর সহযোগী সংস্থা ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় দেখাশোনা করবে। এছাড়া, ভাসানচরে এফডিএমএন-দের বসবাসের কারণে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের ওপর যে প্রভাব পড়বে তা নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৯৯১-৯২ সাল হতে ২৫ আগস্ট ২০১৭ এবং এর পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার হতে আগত প্রায় ১১ লাখ মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তার কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্পাদন করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অতি ঘনবসতি ও পরিবেশের ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ মিয়ানমার নাগরিককে নোয়াখালী জেলার ভাসানচরে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ভাসানচর কিংবা কক্সবাজারে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের থাকার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা সাময়িক। আমাদের মূল লক্ষ্য মিয়ানমারের এ সকল বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন। যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশে ফেরত পাঠানো।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ৩ ডিসেম্বর ২০২০ হতে ৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭২৪ পরিবারের ১৮ হাজার ৮৪৬ জন ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’কে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে আরও প্রায় ৮০ হাজার ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’-কে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। স্থানীয় এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও’র সহযোগিতায় ভাসানচরে স্থানান্তরিত ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’-দের খাবার এবং অন্যান্য খাদ্য বহির্ভূত দ্রব্যসামগ্রী (Non-Food Items) প্রদানের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, এ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে।
UNHCR-এর বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি সভায় জানান, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সহজ হয়েছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এসময় সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র, জননিরাপত্তা বিভাগ, এনএসআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশস্থ আবাসিক সমন্বয়কারী Tuomo Poutianen, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর Richard Ragan ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।