ঢাকা, ৯ কার্তিক (২৫ অক্টোবর) : রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আগামীকাল ডক্টর অব ল’জ উপাধি প্রদান উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ডক্টর অব ল’জ উপাধিতে ভূষিত করার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং জাতির পিতার প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিনম্র শ্রদ্ধা ও হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯২১ সালে মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশের এই বিদ্যাপীঠের যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজও সেই মূলধারা বিকাশমান রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শিক্ষায়তন থেকেই দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মূলতঃ বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষক নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি সেসব বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিকবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আরো কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে— এ আমার প্রত্যাশা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা ও মননশীলতার প্রাণকেন্দ্র করে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ্যে তিনি বলেছিলেন ‘কোনো দেশ বা সমাজের বিকাশের জন্য শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট- এর চেয়ে বড় বিনিয়োগ আর হতে পারে না।’ এই চিন্তা সময় উত্তীর্ণ, এই ভাবনা চিরকালীন। আমার বিশ্বাস, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা সচেতন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে এই বিদ্যায়তন যেরূপ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের কলঙ্কমুক্ত করতে তেমনি উদ্যোগী হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ উপাধিতে ভূষিত করার আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারও পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিকে মেধা ও মননে ধারণ করে অগ্রবর্তী বাংলাদেশকে দেখতে হবে। তাঁর যেসব চিন্তা এখনও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি সেগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতির পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণের শক্তি অর্জনের জন্যই জাতির পিতাকে এই অনন্য সম্মান প্রদর্শন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন সফল হোক- এ কামনা করি।

জয় বাংলা।

খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”