জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার– পরিবেশ মন্ত্রী

ঢাকা, ১৯ জ্যৈষ্ঠ (২ জুন) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজনের লক্ষ্যে সরকার ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড একশন প্লান’ হালনাগাদ করেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে, ‘ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান ইমপ্লিমেন্টেশন রোড ম্যাপ’ তৈরি করেছে। পরিকল্পনা মোতাবেক ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ এর অর্থায়নে দেশে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবো।
পরিবেশ মন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে দুর্যোগের ঝুঁকি’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তাঁর ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান প্রসেস ফর্মুলেশন’ এর জন্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড হতে ২ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন পেয়েছে এবং প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিরসনেও ভূমিকা রাখবে। মন্ত্রী বলেন, সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘স্টান্ডিং অর্ডারস অন ডিজাস্টারস বা দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশসমূহ, ২০১৯ প্রণয়ন করেছে। দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশসমূহ গঠনের উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করা। বাংলাদেশ বিগত সময়ের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর ফলে দেশে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে প্রাণহানির সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবে সুপেয় পানীয় জলের অভাব, কৃষি জমিতে লবণাক্ততা, বেকারত্বসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় উপকুলীয় জনগণের জন্য প্রয়োজন আমাদের উদ্ভাবনী এবং টেকসই উদ্যোগ।
মন্ত্রী বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাব্য প্রভাব নিরসনে সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ নামে একশত বছরের কৌশল প্রণয়ন করেছে। সরকার উপকূলজুড়ে ৪ হাজার ২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। তাছাড়া, দেশের বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অতিরিক্ত ৫২৩টি বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলীয় অঞ্চলে পশুপাখির আশ্রয় প্রদানের জন্য ৫৫০টি ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক এডাপটেশন ফান্ড এর অর্থায়নে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র তীরবর্তী ছোট দ্বীপসমূহে বিভিন্ন অভিযোজনমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে অবহেলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ. কে. এম এনামুল হক শামীম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। জাতীয় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লিডার্স-এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি, পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বক্তাগণ দক্ষিণ-পশ্চিম ঊপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।