প্রধান মেনু

জনপদের শতবর্ষী কপিলমুনি হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ণে ফের এলাকাবাসীর দাবি

এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা (খুলনা) ঃ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লীলাভূমি প্রাচীণ জনপদ কপিলমুনির শত বছরের পুরনো ১০ শয্যা বিশিষ্ঠ সরকারি হাসপাতালটি দীর্ঘ দিন যাবৎ নানা সংকটে চলছে খুঁড়িয়ে। চলতি সরকারের ধারাবাহিক দু’বারের শাষণামলে দেশ উন্নয়নের অগ্র যাত্রায় আরোহন করলেও হাসপাতালটির উন্নয়ন থমকে গেছে অজ্ঞাত কারণে। তবে চলতি উন্নয়ন বান্ধব সরকারের সদিচ্ছা অবহেলিত জনপদের বঞ্চিত মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হতে পারে। উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা বিবেচনা করে আধুনিক কপিলমুনির রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ১৯১৫ সালের ৭ এপ্রিল নিজস্ব ২ একর সম্পত্তির উপর নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। প্রথমত তৎকালীন জেলা পরিষদ,প্রতিষ্ঠাতার প্রদেয় অর্থের লভ্যাংশ দ্বারা পরিচালিত হত কপিলমুনি হাসপাতালটি।

পরে ১৯৭৫ সালে হাসপাতালটি সরকারিকরণ হলেও ২০ শয্যার স্থলে ১০শয্যায় নামিয়ে আনা হয়। জাগ্রত পীর হযরত জাফর আউলিয়া,মহাভারতীয় যুগের কপিলেশ্বর মুনি,বৌদ্ধ যুগের বাগনাথমহন্ত’র স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী দক্ষিণ খুলনার সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি(বিনোদ গঞ্জ) প্রতিষ্ঠা করে দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে শ্রীবৃদ্ধি করেন। ভৌগলিক অবস্থান বিন্যাসে খুলনা,সাতক্ষীরা ও যশোর সীমানা প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত কপিলমুনি হাসপাতালটি সেই স্মরণাতীত কাল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করে আসছে। জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য স্যার পি সি রায় এর অনুপ্রেরণায় বিনোদ বিহারী সাধু শুধু হাসপাতালই নয়, শিক্ষা প্রসারে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির,অমৃতময়ী টেকনিক্যাল স্কুল,অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনির শ্রীবৃদ্ধি করে (বিনোদ গঞ্জ) প্রতিষ্ঠা,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিভিন্ন উপসানালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাস্থ্য-সেবায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন সময়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি হাসপাতালটিতে স্থাপন করেন, এক্স-রে মেশিন। সূত্র জানায়,তৎকালীন খুলনা সদর হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন এক্স-রে মেশিন না থাকায় তৎকালীণ জেলা বোর্ডের প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে কপিলমুনি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মান সহ প্রতিস্থাপন করা হয়, যা আজও দৃশ্যমান।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সেবক আলহাজ্ব এরফান আলী মোড়ল জানান,হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। নাছিরপুর গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শেখ নেছার আলী জানান,ঐতিহাসিক ও বর্ধিষ্ণু জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত অবস্থা কপিলমুনি হাসপাতালের নেই। এলাকাবাসী জানান,বৃহত্তর খুলনার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক প্রাচীণ জনপদ কপিলমুনি। বিভিন্ন সময়ে জন্ম গ্রহন করেছেন, বরেণ্য ব্যক্তিরা। ঐতিহাসিক স্থান ও বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হাসপাতালটির শয্যা বৃদ্ধি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এড. শেখ মোঃ নূরুল হক স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর কপিলমুনি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা উন্নীত করনে ডিও দিয়েছেন। বাজাসস/১০৪/খুলনা-৬/২০১৮-১০৯১ নং স্মারকে উল্লেখ করেন,ঐতিহাসিক বর্ধিষ্ণু জনপদ কপিলমুনি হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও শয্যা সংখ্যা কমপক্ষে ২০ শয্যায় উন্নিত করন এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি এবং সময়ের দাবিও বটে।

বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডাঃ আঃ রব এপ্রতিনিধিকে বলেন,কপিলমুনি হাসপাতালটি দুই একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে একতলা বিশিষ্ট বহি:বিভাগ, দ্বিতল বিশিষ্ট আন্তঃ বিভাগ, ২ টি পুকুর, বেড সংখ্যা ১০টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার -৬টি, অক্সিজেন ফ্লোমিটার ২টি, আবাসিক ভবন (সবগুলি পরিত্যাক্ত) এবং জনবল কাঠামো, ডাক্তার (পদ ২টি) শূন্য ১টি, নার্স (পদ ৪টি) শূন্য ১টি, ফার্মসিষ্ট, অফিস সহকারী ২জন এবং রয়েছে ২জন পরিদর্শন কর্মী। আয়া, বাবুর্চি, নাইটগার্ড, ওয়ার্ডবয় ও ফ্লোর ক্লিনার নাই। হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম ও লেবার ওয়ার্ড নাই।