চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেল সংযোগ স্থাপন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রেলপথ মন্ত্রী সুজন

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ী সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মান কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার সসকাল ১১টার দিকে চিলাহাটি রেলস্টেশনে ওই নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এমপি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রীমতি রীভা গাঙ্গুলী দাশ, নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ শামসুজ্জামান, মহা ব্যবস্থাপক (পশ্চিম) হারুন উর রশীদ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনালের প্রধান গোলাম রহমান আলমগীর, নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, ৫৬ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শাহ আলম সিদ্দিকী. পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের আয়োজনে ও নীলফামারী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মজিবুর রহমান। উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উল্লেখিত অতিথিবৃন্দসহ বক্তব্য রাখেন, ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ফাতিমা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল আলম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফারহানা আকতার সুমী। এছাড়াও অনুষ্টানে রেলপথ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রেলপথ মন্ত্রী এ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগামী জুলাই মাসেই চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেলপথ চালু করা হবে। এরুটে নতুন করে কয়েকটি ট্রেন যুক্ত হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন।
ঢাকার সাথে সরাসরি আমাদের কোন রেল যোগাযোগ ছিলনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সালের সরকার সর্বপ্রথম ঢাকার সাথে নীলফামারী জেলার রেল যোগাযোগ চালু করেন। মন্ত্রী উদ্বোধনকৃত কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন এবং বলেন, দুই দেশের সরকার অতি অল্প সময়ের মধ্যে বৈঠক করবেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন। এতে এধরণের আরও অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সূত্র মতে, ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় দশমিক ছয় কিলোমিটার ওই রেলপথ নির্মান কাজ শেষে পাঁচ দশক পর এ পথে ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ পুণঃস্থাপন হবে। নির্মান কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ট্রেন যাবে ভারতের দার্জিলিং।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে ওই রেল পথটি চালু ছিল। সে সময়ে ভারতের দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ছিল নিয়মিত। এরপর পাক-ভারত যুদ্ধে থেমে যায় সে গতি। সে সময় থেকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই দেশের পরিত্যক্ত ওই রেলপথ নির্মান করে রেল যোগাযোগ পুণঃস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত সরকার ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে তাদের অংশে ৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রেলপথের নির্মানকাজ শেষ করে। ওই অংশে ২০১৭ সালের ৫ নবেম্বর কাজ শুরু করে সমাপ্ত করে ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ।
বাংলাদেশ অংশের প্রায় ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান সিহাব জানান, ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ধীন এক বছর মেয়াদে প্রকল্পটির কার্যাদেশ দেওয়া হয় চলতি বছরের ৮ জুলাই। এরপর থেকে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়।
ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত রেলপথের অবৈধ স্থাপনা সরানো হয়েছে। রেলমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কাজটি পুরোদমে শুরু হবে। চিলাহাটি রেলস্টেশন মাস্টার আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমানে চিলাহাটি থেকে খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী সরাসরি ট্রেন চলাচল করছে। এসব স্থানে পাঁচটি আন্তঃনগরসহ একটি মেইল ট্রেন চলাচল করছে। পরিত্যক্ত রেলপথটি পুণঃনির্মান শেষে ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হবে।