গাংনী; বাঁশের সাঁকোই যাদের ভরসা

গাংনী প্রতিনিধিঃ ভৈরব নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় বিভক্ত করে রেখেছে মেহেরপুর পুর্ব- পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত
অর্ধশত গ্রামের মানুষকে। বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা সাঁকো একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের জনগনের। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাতাযাত, চাষাবাদ, কৃষিপণ্য পরিবহনে সমস্যা ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গাংনীর গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া ভৈরব নদীতে ব্রীজ নির্মানের দাবী দির্ঘদিনের।
স্থনীয়দের দাবী, গাড়াবাড়িয়া – হিতিমপাড়া খেয়া ঘাটে একটি ব্রীজ নির্মাণের। অথচ দীর্ঘ দিনেও সে প্রত্যাশা পূরুণ হয়নি। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী। বিভিন্ন সরকারের আমলে বিবিন্ন সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন স্থানে ব্রীজ নির্মাণ করা হলেও প্রাচীন কাল থেকেই গাড়াবাড়িয়া- হিতিমপাড়া ঘাটে ব্রীজ নির্মাণ হয়নি।
চৈত্র-বৈশাখের দিকে পানি কমে গেলেও আষাড়ের শুরুতেই পানিতে ভরপুর ভৈরব। হিতিমপাড়া, ষোলমারি, শুভরাজপুর, কুতুবপুর, রামদাসপুরসহ অন্তত দশ গ্রামের মানুষকে প্রতিনিয়িত মেহেরপুর জেলা শহর ও গাংনী উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়।
এছাড়া এপারের গাড়াবাড়িয়া, কালিগাংনী, ধলা, নওপাড়া, ভিটাড়াপাড়া, কুরবাড়িয়া এলাকার মানুষের নদী ওপারে কৃষি জমি থাকায় আবাদ করতে যেতে হয় । কৃষি জমির উৎপাদিত ফসল ঘরে আনতে পড়তে হয় নানা বিপাকে। বাঁশের তৈরী সাঁকো কিংবা নৌকাতে কৃষিপন্য বহন করতে খরচ হয় দ্বি-গুন।
অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল বহন করে শহরে নিয়ে আসতে চুকাতে হয় বাড়তি খরচ। ফলে কম মুল্যে স্থানীয় বা বহিরাগত ফড়িয়াদের মাধ্যমে বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষকরা। অনেক জমির মালিক আবাদ করতে না পেরে কম মুল্যে জমি ইজারা দেন।
রামদাসপুর গ্রামের ইউসুব আলী জানান, নদীর ওপারের জমি সবজি আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। অনেক সবজি উৎপাদন হয় কিন্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ন্যয্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কৃষক গোলাম হোসেন জানান, গাড়াবাড়িয়া ঘাটের উপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো অথবা নৌকা যোগে কৃষিপন্য বহন করা বেশ কষ্টসাধ্য। বর্ষায় বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন পারাপারের জন্য ব্যবহার করা হয় নৌকা।
স্থানীয় গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা হিজরুল ইসলাম জানান, নদীর ওপারে রামদাসপুর গ্রামে তার জমি রয়েছে। কৃষিপন্য পরিবহনে অনেক ঝামেলা তাই সে জমি মাত্র কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ওপারের মানুষকে ইজারা দিয়ে এসেছি।
গাড়াবাড়িয়ার প্রবীণ শিক্ষক জোয়াদ আলী জানান, শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষাকালে নৌকা হচ্ছে দুপারের মানুষের ভরসা। সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করেও ব্রীজ নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নৌকার মাঝি বা সাঁকো নির্মানকারিকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।
কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা বলেন, আমার ইউনিয়ন হিসাবে ব্রীজ নির্মাণের জন্য তদবীর চালিয়ে যাচ্ছি। মেহেরপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ।
মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা গাড়াবাড়িয়া-ভৈরব নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মাণ অতিব জরুরী। একটি ব্রীজ নির্মাণের ব্যাপারে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দাবী উত্থাপনসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তবে ব্রীজ নির্মাণ হবে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। ব্রীজটি নির্মাণ হলে দুপারের কয়েক হাজার কৃষকসহ সাধারন মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পুুরুন হবে।