গাংনীঃ কিশোর আশিকের জীবন সংগ্রাম

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃ যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে ছোট ভাইদের ভবিষ্যত ভেবে সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে কিশোর আশিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা বিক্রি করে লেখা পড়া করাচ্ছেন ছোট ভাইদের। পিতা মাতাহীন কিশোর আশিক আজো কোন সরকারী সহায়তা পায়নি। মানবেতর জীবন যাপন করছে গোটা পরিবারের লোকজন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কষবা গ্রামের রাশিদুল ইসলামের ছেলে আশিক। বয়স ১২। যে বয়সে তার বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করার কথা। বিকেলে মেতে ওঠা কথা সহপাঠিদের সাথে খেলাধুলায়। সেই বয়সে আশিকের সকাল আর সন্ধ্যা কাটে চা বিক্রির মধ্য দিয়ে। ছোট ভাই মুস্তাকিম, রিয়াজ ও বোন কুলছুমের মুখে ভাত তুলে দেয়ার জন্য দাদার চায়ের দোকানটিকে এখন আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে নিয়েছে সে।
নিজের ভবিষ্যতকে নষ্ট করে ছোট ভাই বোনদের ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখে আশিক। বছর সাতেক আগে পরোকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রী ও চার শিশু সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে রাশিদুল। তখন থেকেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে চরম বিপাকে প্রথম স্ত্রী সানোয়ারা। রাশিদুল প্রতিবেশীদের চাপে প্রথম স্ত্রী ও চার সন্তানের দেখাশোনা করলেও তিন বছর আগে স্ত্রী সানোয়ারা মারা গেলে সন্তানের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেয় রাশিদুল।
চার শিশু সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেয়ার জন্য দাদা লালন তার পুরানো চায়ের দোকানটি চালু করেন। বৃদ্ধ দাদার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সব স্বপ্ন শেষ করে সংসারের বোঝা মাথায় তুলে নেয় আশিক। আশিকের দাদা লালন জানান, ছোট বেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিল কিশোর আশিক। গ্রামের পাঠশালায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে তার।
পিতার দ্বিতীয় বিয়ে ও মায়ের মৃত্যু সব কিছু নিঃশেষ করে দিয়েছে আশিকের স্বপ্ন। পিতা মাতা না থাকায় একদিকে যেমন খাবারের কষ্ট অন্যদিকে বাস স্থানের সমস্যাটাও প্রকট। একটি ঝুপড়ি ঘরে স্যাত স্যাতে পরিবেশে তাদের বসবাস। ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেল আলী জানান, পাষ- পিতার নৈতিকতার জন্য চারটি সন্তানের আজ দুর্দশা। একই গ্রামে বসবাস অথচ দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় সন্তানদের কোন খোঁজ খবর রাখেনা পিতা রাশিদুল। কোন কোন দিন সন্তানেরা না খেয়ে থাকে।
প্রতিবেশীরা এসব এতিমদের খবর নিলেও বাবা তাদের খোঁজ নেন না। মানবিক দৃষ্টিতে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে সকলের প্রতি আহবান জানালেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন এবং ইতোমধ্যে আশিকের দোকানটি সুন্দর করে ব্যবসার উপযোগি করবেন এবং একটি বাড়ি তৈরী করে দিবেন। এ ছাড়াও ওই শিশুদের জন্য সব ধরণের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।