গাংনীর ষোলটাকা গ্রাম স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে জলাবদ্ধতা নিরসন

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করায় পানিতে আবদ্ধ গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশন করছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামবাসী। পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে অস্থায়ী ভাবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হলেও স্থায়ী দুর্ভোগ লাঘবে গ্রামবাসির দাবী সরকারি সহযোগীতা।
ষোলটাকা গ্রামের লোকজন জানান, প্রতিবছর বর্ষা কালে বৃষ্টির পানি জমে অন্ততঃ ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। প্রায় ছয় মাস তাদের দুর্দশার সীমা থাকে না। কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারী অনুমতি না নিয়ে খালের মুখে পুকুর খনন করায় গ্রামের পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে।পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় গ্রামের সিংহভাগ পরিবারের রান্নার ব্যবস্থা হয় খাটের উপর। গবাদী পশু নিয়েও বিপাকে তারা। ব্যবসা বানিজ্য ছাড়াও চাকরীজীবীগন চলাচল করতে নানা দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
দির্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে সরকারি সহযোগীতা না পেয়ে অবশেষে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেন গ্রামবাসি। প্রায় ৫ লাক্ষাধিক টাকা উত্তোলনের পর শুরু করেন রাস্তার পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের কাজ। স্কিভেটর মেশিন দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার ড্রেন খনন ও প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে খালে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। তবে এটি স্থায়ী কোন সমাধান নয়। সেক্ষেত্রে দরকার সরকারী সহযোগিতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের গাড়িপাড়া ও শেখ পাড়ার পাশ দিয়ে কাস্টদহ গ্রামে যাবার পথে কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও হাঁটু পানি। গ্রামের অন্তত ২০০ পরিবার বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রাম বানিয়াপুকুর ও যুগীরগোফায়। যারা শহরে ব্যবসা করেন তারা আগেই গ্রাম ছেড়েছে।
স্থানীয় যুবক মুনতাসির মিলন আশা বলেন, অনেক বছর আগে যারা ভুল করে যত্রতত্র পুকুর খনন করেছেন তাদের ভুলের খেশারত এখন পুরো গ্রামবাসিকে দিতে হচ্ছে। জনপ্রতনিধিরা বারবার আশ^াস দিলেও বাস্তবে তার উল্টো হয়েছে। আবার যারা পুকুর খনন করেছে তারাও ছাড় দিতে নারাজ। একই কথা জানালেন ব্যবসায়ি ময়নাল হক ও নিরাপদ দাস
। গ্রাম ছেড়ে বানিয়াপুকুর গ্রামে আশ্রয় নেয়া হারুণ, বুলু ও রফিক জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে গ্রাম থেকে পানি বের হতে না পারায় অধিকাংশ লোকের বাড়ি ঘর পানি উঠে। গবাদী পশু নিয়ে কষ্টের সীমা থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা গ্রাম ছেড়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে বাড়ি ফিরবেন তারা। আগামী কয়েক বছরে শতাধিক পরিবার গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে অন্যগ্রাম ও শহরে চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
গ্রাম বাসিরা আরো জানান, পুকুর খননের নীতিমালা আছে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই পুকুর খনন করতে পারে না। অথচ এখানকার লোকজন ইচ্ছামত পুকুর খনন করলেও প্রশাসনের কোন লোক তাদেরকে নিষেধ করেনি। পুকুর খনন কারী আলামীন জানান, খালের মুখে তাদের জমি। ওই জমিতে কোন ফসল হয় না। বছরের পর বছর পড়ে থাকায় মাছের ঘের দেয়া হয়েছে। নিজের জমিতে পুকুর খননের কোন নীতিমালা আছে বলে তার জানা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমার নির্বাচনের পর থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর অনেক বারই আবেদন করা হয়েছে। কিন্ত কোন সুরাহা হয়নি। তবে গ্রামবাসীর দুর্দশা লাঘবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামীতে সরকারি বরাদ্দ এলে সহযোগীতা করা হবে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন গ্রামবাসির দুর্দশার কথা আমি সরেজমিনে দেখে সরকারি ভাবে যা করার বা আমার যতটুকু করণীয় গ্রামবাসিকে সেভাবে সহযোগীতা দেব।