কুয়ালালামপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন

মালয়েশিয়া (কুয়ালালামপুর), ১৮ ফেব্রুয়ারী : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মালয়েশিয়ার কয়ালালামপুরে সম্প্রতি দু’দিনব্যাপী ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ‘মহামারী ও ভাষা’শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল অভ্ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স, টেলরস্ ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর ভিডিও বার্তায় কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বিশেষ ক্ষেত্রে ভাষার স্পষ্ট ব্যাখ্যার ওপর গুরত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের কোন কোন নেতা যেখানে জাতীয়তাবাদী/সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে মহামারীকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করছেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা জার্মানীর তৎকালীন চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের মতো নেতারা এ সময়ে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, সংহতি, এবং অন্তর্ভুক্তির বার্তা দিয়েছেন। মালদ্বীপের কলা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী ইউমনা মামুন তাঁর ভিডিও বার্তায় করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথাও তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ গোলাম সারোয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণের চেতনাকে বহন করে। টেলরস ইউনিভার্সিটির নির্বাহী ডিন প্রফেসর ড: লীথিয়ানান্থন আরি রাগাভান বলেন, ভাষা-সৃষ্ট যোগসূত্র সংস্কৃতির দেয়াল পেরিয়ে যেতে পারে । কোভিড-১৯ মহামারী ভাষা ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, চলমান মহামারী কাটিয়ে উঠতে হলে ভাইরাসের ভাষা, রাষ্ট্রের ভাষা এবং জনগণের ভাষার মধ্যে মেল-বন্ধন তৈরির কোন বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে এশিয়া প্যাসিফিক রেজিওনাল ব্যুরো ফর এডুকেশন-এর পরিচালক শিগেরা অয়াগি, মালয়েশিয়ায় ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. রাশেদ মোস্তফা সারওয়ার বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলরস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. ওয়ান জাওয়াই। ‘মহামারী ও ভাষা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় থাইল্যান্ডের চুললিংকন ইউনিভার্সিটির ড. নুংথাই, সিঙ্গাপুরের শামিনি ফ্লিন্ট, ফ্রান্সের প্রীতা সমরাসান, হংকং-এর জোসেফ গঞ্জালেস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আমেনা মোহসিন অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস্ স্বাগত বক্তব্য দেন। ভারতের হাইকমিশনার, মালদ্বীপ ও নেপালের চার্জ দ্য এফেয়ার্সও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন । বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ছাড়াও ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, রাশিয়া, জাপান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং শ্রীলংকার হাইকমিশন/দূতাবাস সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন ।
অনুষ্ঠানে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’গান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। বিভিন্ন দেশের স্বতঃস্ফূর্ত ও বৈচিত্রময় উপস্থিতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল চেতনাকেই প্রতিফলিত করে।