কলকাতায় পালিত হলো বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস

কলকাতা, ১৫ আগস্ট : বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন চত্বরে স্থানীয় সময় সকাল ৮.০০ ঘটিকায় শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। “মুজিব চিরঞ্জীব”মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দুপুরে খাবারের আয়োজন করা হয় এতিম খানার দুস্থ ও অনাথ শিশুদের জন্য। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র হিসেবে ১৯৪৫-৪৬ সালে ৮, স্মিথ লেনের বেকার গভর্নমেন্ট হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিকেলে ‘বাংলাদেশ গ্যালারিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। যথাক্রমে রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন কাউন্সেলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কাউন্সেলর (কন্স্যুলার) মোঃ বশির উদ্দিন, পরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন, প্রথম সচিব (বাণ্যিজিক), মোঃ শামসুল আরিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব (রাজনৈতিক), মিজ সানজিদা জেসমিন।
সম্মাননীয় অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলকাতা প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট শ্রী স্নেহাশীষ সুর বলেন, দেশবাসীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর এতটাই বিশ্বাস ছিল যে, তিনি নিজের জীবন নিয়ে সতর্ক বার্তাও গুরুত্ব দেননি। পশ্চিমবঙ্গ পিএসসি এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং পশ্চিমবঙ্গের রেডক্রস এর সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ নুরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত রুমে থাকতে পারাকে জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি হিসাবে বর্ণনা করেন তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর শ্রী সুরঞ্জন দাশ বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করেন উন্নয়নশীল বিশ্বের মুক্তির মহানায়ক হিসেবে। সাবেক সংসদ ও বার এসোশিয়েসন কলকাতা-এর সাবেক সভাপতি, সরদার আমজাদ আলী স্বাধীনতা যুদ্ধে “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক সমিতি’ এর ভূমিকার বর্ণনা দেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মূখ্যমন্ত্রীর মূখ্য উপদেষ্টা শ্রী আলাপন বন্দোপাধ্যায় বলেন, ভাষিক জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নির্মাণে করে দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি ও পরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
সমাপনী বক্তব্যে উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ১৯৭৫ সালে বেঁচে গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের ওপর পরবর্তীতে ১৯ বার হামলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন সিকদার মোঃ আশরাফুর রহমান, কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) এবং দূতালয় প্রধান।
সবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।