করোনা মোকাবিলায় বাড়তি সহায়তা দিতে এডিবির প্রেসিডেন্টেকে অর্থমন্ত্রীর অনুরোধ

ঢাকা, ৭ বৈশাখ (২০ এপ্রিল): নভেল করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণার জন্য এডিবি’র প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এডিবির প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতের জরুরি সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য এডিবি তৎক্ষনাত ভিত্তিতে বাংলদেশের জন্য যে ৬০২ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে সেজন্যও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে ফোনে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন।
এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, এডিবি ঘোষিত সহযোগিতা প্যাকেজ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এবং বেসরকারি খাতকে এই মহামারি মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশে এডিবির চলমান প্রকল্প ও পাইপলাইনের প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির প্রায় ৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় ৬৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, পাশাপাশি পাইপলাইনে রয়েছে প্রায় ৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ৮১টি প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী ও এডিবি প্রেসিডেন্টের মধ্যে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই প্যাকেজের অর্থ ব্যয়ে জনসাধারণের ব্যয়বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জালকে প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, পরিষেবা খাত এবং কুটির শিল্পগুলিকে সুরক্ষার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে
কার্যনির্বাহী মূলধনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাইবোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছে বাংলাদেশ। এই ক্রান্তিকালিন সময়ে এডিবির তাৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল, কিন্তু বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতে আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে আরো অনেক বেশি।
বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এডিবি বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অনুরোধ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের উপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য এডিবি থেকে বর্ধিত প্রকল্প সহায়তা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন কর্মীদের – চিকিৎসা কর্মী, সিভিল প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী- জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, কোভিড-১৯ এর কারণে চাকুরী হারানো দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃস্টির জন্য এবং অতি- ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং অছাড়কৃত ওসিআর লোনের কমিটমেন্টে চার্জ হ্রাসের অনুরোধ করেন। এডিবি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উল্লিখিত খাতসমূহে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন বলে জানান।