প্রধান মেনু

কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহীতাসহ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই ।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণার প্রবর্তন করেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরেই দেশে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তদানীন্তন মহকুমা ও থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্নকে আরো একধাপ এগিয়ে নেয়ার প্রয়াসে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শুরুতেই আমরা প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে দেশব্যাপী মোট ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সেই আলোকে ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নে আমি দেশের সর্বপ্রথম ‘গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রতিষ্ঠা করে এর শুভ সূচনা করি এবং ২০০১ সালের মধ্যেই আমরা ১০ হাজার ৭ শত ২৩টি অবকাঠামো স্থাপনপূর্বক প্রায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করতে সমর্থ হই।

জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার মতো অন্যতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আমরা আবার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করি। সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সেবার পরিধি সম্প্রসারিত হওয়ার প্রেক্ষাপট ৫ শতাংশের পরিবর্তে বর্তমানে ৮ শতাংশ জমিতে চার কক্ষবিশিষ্ট নতুন নকশার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৩১৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮১১টি নতুন নকশার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২২ সালে ৭৭১ জন নতুন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নিয়োগসহ এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২৯৯ জন সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বমূলক একটি কার্যক্রম। আমরা গত ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন’ পাশ করেছি। এসকল ক্লিনিক থেকে সারাদেশের প্রান্তিক জনপদ স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ে প্রাথমিক সেবাসমূহ পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ সকল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ঔষধ ও স্বাস্থ্য-সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এবার ঔষধ ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী বাবদ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বরাদ্দ ২৪১ কোটি বৃদ্ধি করে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। কর্মরত সকল সিএইচসিপিকে বিনামূল্যে ল্যাপটপ ও মডেম দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সকল কমিউনিটি ক্লিনিক হতে ডিজিটালি অনলাইন রিপোর্টিং করা হচ্ছে। সিসি কর্মএলাকায় অবস্থানরত থানার প্রত্যেক সদস্যের ডিজিটালি হেলথ ডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১১ লাখ গ্রামীণ জনগণকে হেলথ আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে। আমাদের সরকারের এই পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত ব্যাপক সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। জাতিসংঘ প্রথমবারের মত কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ঐতিহাসিক এ প্রস্তাবটি সরকারি, বেসরকারি অংশিদারিত্বে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের সরকারের উদ্ভাবনী নেতৃত্বের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এ অভূতপূর্ব স্বীকৃতি ও সম্মানের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে

সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এমডিজি পুরস্কার, সাউথ-সাউথ পুরস্কার, গ্যাভি পুরস্কার ও ভ্যাক্সিন হিরো পুরস্কারের মতো অনেক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছি।

কমিউনিটি ক্লিনিক একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। আমি এই প্রতিষ্ঠানটির টেকসই অগ্রযাত্রায় সকলের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, স্মার্ট কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তরোত্তর সম্মান বয়ে আনবে। দেশের স্বাস্থ্যখাতের সকল ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলব।

আমি কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”