কবি সুফিয়া কামালের ১১০ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ৫ আষাঢ় (১৯ জুন) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২০ জুন কবি সুফিয়া কামালের ১১০ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন: “গণতান্ত্রিক এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১১০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। একদিকে তিনি ছিলেন আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি, অন্যদিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তাঁর আপসহীন এবং দৃপ্ত পদচারণা।
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা ও প্রতিজ্ঞা কবি সুফিয়া কামালের জীবনে সঞ্চারিত হয় ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। তাঁর দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রীনিবাসের নাম ‘রোকেয়া হল’ রাখা হয়। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার বেতারে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলেন। শিশু সংগঠন কচিকাচার মেলা’র তিনি প্রতিষ্ঠাতা।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামসহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি তাঁকে জনগণের ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে। তাঁর স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য ‘বেগম সুফিয়া কামাল’ হল নির্মাণ করে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মভাবে হত্যা করার পর যখন এদেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয়, তখনও তাঁর সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল। কবি বেগম সুফিয়া
কামালের সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর সাহিত্য চর্চা। ১৯৩৮ সালে কবি সুফিয়া কামালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাজের মায়া’র মুখবন্ধ লেখেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যা সেই সময়ের পাঠকসহ লেখকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ-সংস্কার, নারীমুক্তি এবং শিশুতোষ রচনাসহ বিভিন্ন বিষয় তাঁর লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়েছে। কবির ভাষায়-
আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলাতোমরা এযুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা। আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
কালজয়ী কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১১০তম জন্মদিনে তাঁর জীবনদর্শন ও সাহিত্যকর্ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পাঠকের হৃদয় আলোকিত করবে- এই প্রত্যাশা করি।জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”