প্রধান মেনু

এলাকায় চলছে জুয়ার আসর

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারী জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। পুলিশের নজর এড়াতে সংঘবদ্ধ জুয়ারিরা গ্রামের ফাঁকা মাঠ, বাঁশঝাড়, ঝোপ-জঙ্গলসহ শহরের চিহ্নিত স্থানগুলোতে পরিচালনা করছে
এসব জুয়া। তাস, মোবাইল, লুডুসহ বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া এসব জুয়ার আসরে গুটি কয়েক ব্যাক্তি লাভবান হলেও নিঃস্ব হচ্ছে  অধিকাংশ মানুষজন। সেই সাথে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে উঠতি বয়সী যুব সমাজ ও নিজ আয়ের মানুষ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে, নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। সচেতন মহলসহ অভিভাবকরা জুয়া বন্ধে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী জেলার সদর উপজেলাসহ অন্য ৫টি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের গ্রামাঞ্চলসহ পৌর এলাকায় বিভিন্ন পাড়া- মহল্লায় এসব আসরে চিহ্নিত জুয়ারিদের উপস্থিতিতে পরিচালিত হচ্ছে জুয়া। উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়নগুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং পুলিশ আসার সম্ভাবনা কম থাকায় গ্রামাঞ্চলের ফাঁকা মাঠসহ, বাঁশঝাড় ও ঝোপ-জঙ্গলে বসছে এ আসর। অভিযোগ রয়েছে ওইসব এলাকার অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এসব আসরে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষজন অংশ নিচ্ছে। বিশেষ করে উঠতি যুব সমাজসহ নিজ আয়ের মানুষেরা এসব আসরে নিঃস্ব হচ্ছে। ইউনিয়নগুলোর জুয়া প্রসঙ্গে ওইসব এলাকার অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই জুয়ার বিষয়টি জানলেও তারা নিশ্চুপ। ফলে ওইসব জুয়া চলছে অনেকটা কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই। ওইসব এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রতিদিন সকাল থেকে চালু হওয়া জুয়ার আসর চলে রাত পর্যন্ত। আর এসব জুয়ায় গুটি কয়েক ব্যক্তি লাভবান হলেও বাকীরা সর্বশান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে।

আবার অনেকে জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। তারা ইউনিয়নগুলোর জুয়া বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে গ্রামাঞ্চলের মতো শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় প্রতিদিনই চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। সৈয়দপুর শহরের কাজীহাট পানি ট্যাংকিসহ আশপাশের নির্জন স্থানে, বাঁশবাড়ী উর্দূভাসী ক্যাম্পের পিছনে ফাঁকা মাঠ, মদীনা লেন এলাকার সেপটি ট্যাংক ও চিপস্ ফ্যাক্টরীর পিছনে, মিস্ত্রিপাড়ার রেলওয়ে ব্রীজ ওয়ার্কসপের পাশে, হাতিখানা কবরস্থানের পাশে ও বানিয়াপাড়া রেল ব্রীজের পাড়ে, উত্তরা আবাসন এলাকা, রাসুলপুর ফিদা আলী ইন্সটিটিউট সংলগ্ন মাঠ, রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, রেলওয়ে মাঠ সংলগ্ন পিকআপ স্ট্যান্ড, সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের মাঠ, গোলাহাট-মুন্সিপাড়া রেলওয়ে কলোনী ও ক্যাম্প এলাকায়।

দিন রাত এসব জায়গায় প্রকাশ্যেই চলছে জুয়ার আসর। যেখানে উঠতি বয়সীরাও ভীর করছে এবং সর্বশান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জুয়ার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালালেও জুয়ারিরা পালিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার কারণে ভোটের ভয়ে জুয়ার বিষয় অবগত হয়েও জনপ্রতিনিধিরা কিছু বলেন না। তাই জুয়ারিরা জনপ্রতিনিধি সহ ভোট দূর্বলতাকে পুঁজি করে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে  জুয়ার আসর। এমনকি কাউন্সিলররা এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছেও মুখ খুলতে নারাজ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনের পর দিন জুয়ার দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার পরিবেশ কলুষিত হয়ে পড়েছে। এতে করে এলাকাবাসী তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ এলাকার সচেতন মহল পুলিশী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জুয়া চলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল হাসনাত খান বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। তাই জুয়া খেলার খবর পেলেই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জুয়ারিরা পালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে জুয়া বন্ধের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে প্রতিবাদ করতে হবে। এজন্য ওইসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ বিষয়ে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।