এখন অপরাধ করে কেউ শাস্তি এড়াতে পারে না — আইনমন্ত্রী

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারপতি সিকান্দার আলী স্মৃতি বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে আইনের শাসন এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ শিরোনামে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে এখন এই নীতি ও আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং অপরাধ করে ক্ষমতা বা রাজনৈতিক পরিচয়ে কোনো অপরাধী আর বিচার এড়াতে পারে না। উপস্থাপনায় আইনমন্ত্রী আইনের শাসনের ইতিহাস, বাংলাদেশে আইনের শাসনের মূলনীতি লঙ্ঘন এবং আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আইনের শাসন সংবিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি হলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। বাংলাদেশে আইনের শাসনের নীতির সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন ঘটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের পর। কারণ এই হত্যাকা-ের পর খন্দকার মোস্তাক একটি ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারে পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই অর্ডিনেন্স ছিল বাংলাদেশের একটি কালো আইন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর এই অর্ডিনেন্সকে শুধু আইনেই পরিণত করেন নি, তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। খুনিদের রক্ষা করেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী এবং রাজাকারদের আইনগত বৈধতা দিয়েছিলেন।
এর মাধ্যমে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার প্রার্থীদের আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। মন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারকার্য শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করলে সুপ্রিম কোর্টে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের আপিল শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে কয়েকজন বিচারপতি আপিল শুনতে বিব্রত বোধ করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আইনের শাসনের নীতি প্রতিষ্ঠার বদলে জোর যার মুল্লুক তার নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানি গতি পায় এবং এ মামলার রায় কার্যকর করা হয়। পাশাপাশি জেল হত্যা মামলা, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার করা হয়। দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতি সিকান্দার আলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. নাইমা আক্তার এবং বিচারপতি সিকান্দার আলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডের দাতা সারওয়ার সুলতানা বক্তৃতা করেন।