একাধিক আন্তর্জাতিক খ্যাতাপে ভূষিত হলেন বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ

নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০০৫ সালের ঘটনা । টিনের দুটি ঘর। তাতে প্রায় আট দশটি রুম। ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলার মাঝে এটিও একটি নিভৃত গ্রাম। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরেই যাতায়াত গ্রামের সকল মানুষের। দুচোখ ধাধানো ফসলের মাঠে প্রায় সবাই ব্যস্ত, এ চিত্র প্রতিদিনের। শিক্ষার আলো এ এলাকায় এতটাই নিয়ন যে তা প্রায় না থাকার মতই। চতুর্দিক নদী বিস্তৃত এ গ্রামটিকে চরাঞ্চল বললেও ভুল হবে না। এর মাঝে একটি রুমে বসে আছেন তিনি। ভিতরে ঢুকতেই একটি মাঝ বয়সি শিক্ষক মিষ্টি ভাষায় কথা বলতে শুরু করলেন।
ঘটনাটি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার আলহাজ্জ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের। বুঝতে বাকি রইলো না তিনিই অধ্যক্ষ। কথার প্রেমে মঝে ভর্তি হলাম। এ চিত্র শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে শত শত সুবিধা বঞ্চিত, হতদরিদ্র ও প্রায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আলোর পথ দেখিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য গুণি এ মানুষটি। আর তাই দেশের সীমানা পার হয়ে এবার উপমহাদেশে শিক্ষা বিস্তারে একাধিক আন্তর্জাতিক খ্যাতাপে ভূষিত হলেন বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল আবুল কালাম আজাদ। সামাজিক উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ভারত- বাংলাদেশ সম্প্রীতি উৎসবে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ স্মারক সম্মাননা ও মহাত্মাগান্ধী এ ওয়ার্ড ২০২০ দেওয়া হয়।
গতকাল বিকালে ভারতে কলকাতার সল্টলেকের রবিন্দ্র ও কাকুরা ভবন ও অমিচিন স্মরণীতে পৃথক পৃথকভাবে বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁকে ঘোষণা করা হয়। শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল আবুল কালাম আজাদ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার মৃত আ: আজিজ মাষ্টারের ছেলে। মা মোছা: হালিমা বেগম একজন আদর্ম গৃহিনী। মায়ের হাতেই তাঁর শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি। বাবার কর্মরত গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে একই উপজেলার পাইস্কা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ধনবাড়ি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। ভর্তি হন প্র্যাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে। স্নাতকোত্তর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মায়ের নানার প্রতিষ্ঠিত কলেজে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন ১৯৯৫ সালে। এখন পর্যন্ত এ কলেজটি তার হাত ধরে পেয়েছে সফলতার ছোঁয়া। কাজিপুর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পেয়েছেন খ্যাতি, রক্ষা করে চলেছেন অগ্রগতির ধারাবাহিকতা।
এক সময় সময় যেটা মনে হত নিভৃতপল্লী শিক্ষার আলোয় এখন তা সকল নাগরিক সুবিধাসহ আধুনিকতার অন্যতম চরনভূমি হিসেবে পরিচিত। নিজ এলাকার বিভিন্ন স্কুল , কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে রেখেছেন অনবদ্য অবদান। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদকসহ বিভন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। অনুষ্ঠানটিতে পশ্চিম বঙ্গের মন্ত্রী শশী পাঞ্জা, কোলকাতার মেয়র ফিহাদ হাকিম, বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার মো: জামাল উদ্দিন, আইসিসিআর এর পরিচালক গৌতম দেসহ বাংলাদেশ ও কোলকাতার গণ্য মাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।