উপজেলার সমগ্র গ্রামঞ্চল পর্যন্ত মরণ নেশা ইয়াবা, গাজাঁ ও ফেন্সিডিলের ভয়াবহ বিস্তার-প্রশাসন নিরব

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সমগ্র গ্রামঞ্চল পর্যন্ত এখন মরণ নেশা ইয়াবা, গাজাঁ ও ফেন্সিডিলের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। উপজেলার ১১নং আবাইপুর ইউনিয়নে মাদক ও জুয়ার হাটে পরিণত হয়েছে হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা। ১০নং বগুড়া ইউনিয়ন,১১নং আবাইপুর ইউনিয়ন ও ১২নং নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়ন জুড়ে সম্পৃক্ত আছে তিন ভয়ঙ্কর গডফাদার , প্রশাসন দেখেও যেন না দেখার ভুমিকায় নিরব থাকেন।
শুধু শৈলকুপায় নয় মাদকের নিরাপদ রুট এই শৈলকুপার হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা । এখানে গাঁজার পাশাপাশি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল। যা উঠতি বয়সি তরুন-তরুনীদের হাতে খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছে। মাদকের মরণনেশায় বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ প্রবণতা। সৃষ্টি হচ্ছে অশান্তি, ভেঙ্গে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। সম্প্রতি মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।আবাইপুর ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে,পাড়া-মহল্লা পর্যায়ে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, ফেন্সিডিল,গাজা, হেরোইন, প্যাথেডিনসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে সমাজ ও পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসছে, বেড়েছে সামাজিক গোলোযোগসহ নানা ধরনের অপরাধ।
ধনী-দরিদ্র উভয় পরিবারের কিশোররা,স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী বিশেষ করে তরুণ সমাজ বিপধগামী হচ্ছে। এলাকার মাদক বিক্রেতারা সামাজিক ভাবে দুটি গ্রুপে বিভক্ত থাকলেও মাদক ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা আবার এক সাথে বানিজ্য করছে। হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা,মদনপুর গ্রাম,কমিড়াদহ গ্রামসহ গোটা আবাইপুর ইউনিয়ন জুড়ে সর্বনাশা মরণ নেশা ইয়াবা,গাজাঁ-ফেন্সিডিল,অনৈতিক নারী ব্যবসায় সমগ্র ইউনিয়ন ছয়লাব হয়ে গেছে।গুটি কয়েক সন্ত্রাসি,কালোবাজারি,চাদাঁবাজরা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে রাতানাতি লক্ষ লক্ষ,কোটি কোটি টাকার মালিক বনেগিয়েছেন।তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে হাটফাজিলপুরের বাজারের সকল ব্যবসায়ি-দোকানীরা।জীবনের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাইনা।হাটফাজিলপুর ক্যাম্প পুলিশের চোখের সামনেই চলছে মাদক বেচাঁকেনা ও সেবন।সাপ্তাহিক হপ্তার রফাদফায় দেখেও না দেখার ভান করেন প্রশাসন।হপ্তা না পেলেই মাদকের আস্তানায় হানা দেন।
এখন ইয়াবা,গাজা ব্যাপকতার হার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ফেন্সিডিলসহ অন্য সব মাদকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। গত কয়েক বছর আগেও যে ইয়াবা অভিজাত নেশা হিসাবে পরিচিত ছিলো, তা এখন উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা ইয়াবা আসক্ত তাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চরের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গেছে। হাটফাজিলপুর বাজার এলাকায় মাদকের অবাধ বিচরনে শংকিত হয়ে পড়েছে উঠতি বয়সী তরুন-তরুনী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা।এছাড়াও গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ নারীদের নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চলছে হরহামেসে।
হাটফাজিলপুর বাজার এলাকার মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তিন ভয়ঙ্কর গডফাদার সহ দুই ডজন লোক মাদক বিক্রেতার সাথে জড়িত। চুনোপুটিদের কয়েক দফায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ভ্রাম্মমান আদালত কয়েক জনকে ধরে শাস্তি,জেল-জরিমানাও করেছে কিন্তু গডফাদাররা সহ দুই ডজন প্রধান মাদক ব্যবসায়ি রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। জানা গেছে, হাটফাজিলপুর বাজার এলাকা,মদনপুর শশ্মান ঘাট,হাটফাজিলপুর পশ্চিম পাড়া এলাকা,কৃপালপুর স্কুল এলাকা,যুগনি-বাগনি এঁ এলাকা ,কুমিড়াদহ গ্রামসহ ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে মাদক দ্রব্য অবাদে বিক্রয় ও সেবন চলে।
নেশার জন্য নির্ভয়ে-নির্দিধায় এসব কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে খুন, চুরি, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপকর্মে। এরা একাধিকবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে।হাটফাজিলপুরে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অনেককে জেল-জরিপানা করা হয়েছে। পরর্বতীতে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় মাদক সেবন ও ব্যবসায় ফিরে যায় তারা। হাটফাজিলপুর পুলিশক্যাম্প এর কতিপয় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সখ্যতা এবং তারা ভয়ঙ্কর চরিত্রের হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহস পায় না। কোন কোন সময় চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও অভিভাবক গডফাদাররা তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্যদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী জড়িত প্রভাবশালী গডফাদারদের সখ্য আছে। যে কারণে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা বন্ধের প্রচেষ্টা সফল হয় না। ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে মাদক ও জঙ্গিবাদের আস্থানা ভয়াবহতা আকার ধারন করেছে। মাদকাসক্তি প্রতিরোধে অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হতে হবে। মাদক সমস্যার মূলে রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী, তদন্তকারী র্কমর্কতার ক্রুটিপূর্ণ জব্দতালিকা। যে কারণে অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর থেকে সহজে বেরিয়ে যায়। মূল ব্যবসায়ী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে আর বহনকারী ধরা পরে। গডফাদাররা বেঁচে যায়, মাদক ব্যবসায়ীরা সরকার দোলিও বড় বড় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
মন্দ লোকের সিন্ডিকেট থাকে কিন্তু ভালো লোকের তেমন কোন সিন্ডিকেট থাকে না। অথচ আমাদের সবার ভালো থাকার জন্য ভালো মানুষের মধ্যে ঐক্য দরকার। তবেই দেশ থেকে মাদক ব্যবসা নির্মুলসহ ভালো উদ্যোগ সফল হবে। মাদক সিন্ডিকেটের ছড়িয়ে থাকা বিশাল শক্তিশালী জালের মাধ্যমে সহজে ছড়িয়ে পড়ছে এই মরণ নেশা ইয়াবা। মরণনেশা ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় হাজার হাজার পরিবারের সন্তানের জীবন আজ বিপন্নের পথে। এমন সন্তানদের মায়ের কান্না এখন প্রায়ই দেখা যায়। অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে প্রসার ঘটছে ইয়াবা ব্যবসার। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গের নাম ভাঙিয়ে এই ব্যবসা করছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা । সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য সহযোগীতায় সুচারু ভাবে চলছে এই ইয়াবার ব্যবসা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হয়। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে করে ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা। বানের পানির মতো ঢুকছে ইয়াবার চালান। আর যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে কোন এক অদৃশ্য শক্তিতে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে তারা । আবার ফিরছে ইয়াবা ব্যবসায়। মাদক ব্যবসা বন্ধে দরকার স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও পারিবারিক উদ্যোগের। আবাইপুর ইউনিয়নে মাদক ব্যবসা যারা করে প্রশাসন, সুধী সমাজের সমাজপতিরা এবং জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তাদের চেনে।
তারা সবাই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এ সব মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে হাটফাজিলপর এলাকা জুড়ে ১২নং ইউনিয়ন,১১নং ইউনিয়ন ও ১০নং বগুড়া ইউনিয়ন এলাকায় মাদকের জাল বিস্তার করেছে। প্রশাসন ও সমাজপতিরা যদি উদ্যোগ নেয়, শৈলকুপা উপজেলায় কেউ মাদক ব্যবসা করতে পারবে না তাহলে এটা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক সমাজ । মাদক ব্যবসা যারা করে তাদের কি এমন শক্তি যে সাধারন মানুষ তাদের নাম পর্যন্ত মিডিয়া কর্মিদের কাছে বলতে চায় না? সবাই তাদের চেনে, প্রশাসন চেনে কারন প্রশাসন তাদের মাঝে মধ্যে গ্রেফকার করে। জনসাধারণ তাদের চেনে কারন তারা দীর্ঘ দিন ধরে জনসম্মূখে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার অফিচার্স ইনচার্জ আলমগীর হোসেন জানান, শৈলকুপায় যেখানেই মাদক ব্যবসা,অনৈতিক নারী ব্যবসা বা জুয়ার আসরের খবর পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে এবং থাকবে। মাদক বন্ধে জিরো টলারেন্সে রয়েছে শৈলকুপার পুলিশ প্রশাসন। মাদকের ব্যাপারে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না,তারা যতবড় প্রভাবশালি ব্যক্তিই হোক না কেন। আমি এখানে যোগদানের পর মাদকসহ অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে তাদের নামে মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরন করেছি। মাদক বন্ধে আমি সব সময় সোচ্চার আছি।তিনি আরো বলেন,হাটফাজিলপুর বাজার এলাকার সন্ত্রাসি চাদাঁবাজ ও মাদক ব্যবসায়িদের চিহিুত করে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবসর প্রাপ্ত এক কর্মকর্তা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন,হাটফাজিলপুর বাজার এলাকার গুটি কয়েক গডফাদার রাতারাতি কোটিপতি হবার লোভ-লালশায় মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে এলাকার যুবসমাজকে মারাক্তক ধবংশের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এলাকার জনগণ ও পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং বিক্রেতা ও সেবনকারীদের নির্মুল করে এলাকে মাদকমুক্ত করতে হবে। দ্রুত মাদক ব্যবসায়ি ও মাদক সেবনকারিদের এলাকার মানুষদের সাথে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা বর্তমান জরুরী হয়ে পড়েছে।