উদ্বোধনের ২বছর পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি চিলমারী নদীবন্দর
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চিলমারী নদী বন্দর সরকারী ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষনাসহ উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান বন্দরের র্কাযক্রম চালু হয়নি। ফলে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত কার্যক্রম শুরুর আশ্বস বন্দর কর্তৃপক্ষের। জানাযায়, ১৯৭২ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নৌ পথে মালামাল পরিবহনের জন্য একটি নৌ-প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ব্রিটিশ আমল হতে কলকাতা থেকে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ যাতায়াত চালু ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও নৌ পথের উন্নয়ন না হওয়ায় বন্দরটি অচল পড়ে।
কিন্তু বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা গতিশীল করতে পুনরায় চিলমারী বন্দরটি সচল করার উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিলমারী সফরে এসে চিলমারীকে নৌ বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেন।
কিছুদিন পর ২৩সেপ্টেম্বর চিলমারীর রমনা ঘাট নামক স্থানে পন্টুন স্থাপন করে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র নদীবন্দর উদ্বোধন করেন তৎকালীণ নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান। এছাড়া বন্দরের উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়। বাধ সাজে জেলা পরিষদ। বন্দরের শ্যালোঘাটসহ নদ-নদীর ঘাট পরিচালনার করে আসছে জেলা পরিষদ। বিআইডব্লিউটিএ-কে অবগত না করেই বন্দরের ইজারা দেয়া হয়।
এনিয়ে দু’পক্ষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে অন্তদ্বন্দ্বের। বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত মামলা পর্যন্ত গড়ালে আরো জটিলতার সৃষ্টি হয়। সমস্যা সমাধানে সে সময় দায়িত্ব প্রাপ্ত নৌমন্ত্রী শাজাহান খান গত বছরের জুন মাসে চিলমারী সফরে আসেন এবং চিলমারী নদীবন্দর পরিদর্শন কালে সকল সমস্যা এবং দ্বন্দ্ব সমাধান করাও আশ্বাস দেন। কিন্তু আশ্বাসের ছয়মাস অতিবাহিত হলেও চিলমারী নৌ বন্দরের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় হতাশা সাধারণ মানুষ।
নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিলমারী এক সময় একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। এ স্থানটি অনেক আগে থেকেই ‘চিলমারী বন্দর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বন্দর দিয়ে হাজার হাজার মণ পাট, ধান, চাল প্রভৃতি
পণ্য নিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা হতে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত ছিল। বন্দরটিকে ঘিরে চিলমারীতে গড়ে উঠেছিল পাট,সরিষা, ধান, গম, বাদাম, তিসির ও
ভুট্টার গুদাম ঘর। দেশের নামিদামি পাট কোম্পানিগুলো চিলমারীতে এসে অফিস খুলে পাট ক্রয় করতেন।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বিভিন্ন ধরনের মালামাল ক্রয় করার জন্য দিনের পর দিন অবস্থান করতেন। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিএ সেখানে পাইলট বিট ও এসএসবি স্টেশন স্থাপন করে। তবে কালের বিবর্তনে আর নদী ভাঙ্গনসহ নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে চিলমারী বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্দর কেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বন্ধ হয়ে পড়ে। চিলমারী নদীবন্দরটি পায়রা সমুদ্র বন্দর হতে নৌপথে ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের একমাত্র নৌ রুট। ফলে চিলমারী নদীবন্দরের উন্নয়ন করা সম্ভব হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। এলাকার আঃ রহিম(৫০), শহিদুল(৫৫),শফিকুল ইসলাম(৬৫),মজিবর রহমান(৭০)সহ অনেকেই জানান, দুই বছর পেড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়নি। আমাদের মধ্যে বন্দর নিয়ে আশার জেগেছিল।
এলাকার উন্নয়ন হবে,মানুষের কর্মসংস্থান হবে,কৃষকদের উপকার হবে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু না হওয়ায় আমরা দিধাদ্বন্দে আছি বন্দরের মুখ দেখব কি? তবে তারা বলেন শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে তিনি আমাদের হারানো ঐতিহ্য চিলমারী বন্দরটি চালু করবেন। এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ন পরিচালক সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে জানান ইতিমধ্যে বন্দরের উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৩শত কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দ্রুত নদী ড্রেজিং এর কাজ শুরু হবে সাথে নদী বন্দরের কার্যক্রমও শুরু হবে।