প্রধান মেনু

ইটভাটাগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে শিশু শ্রম

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ইটভাটাগুলোতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে স্বল্প পারিশ্রমিকে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করে একদিকে যেমন মজুরি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে অন্যদিকে শিশুশ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে চলেছে ভাটা মালিকরা। এ বিষয়টি দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষও অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করায় দিন দিন শিশু শ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সেক্টরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল এলাকায় অবস্থিত ফাইভ স্টার ব্রিকস ফিল্ডে কাজ করছে স্কুল পড়ুয়া বেশ কয়েকজন শিশু।

তারা কাচা ইটের পাইয়ে থাকা ইটগুলো রোদে শুকানোর কাজ করা। প্রতিটি পাইয়ে প্রায় ২ হাজার থেকে ২২ শ’ কাচা ইট থাকে। এ পরিমান ইট উল্টিয়ে দিয়ে শুকানোর জন্য প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় মাত্র ২০ টাকা। অথচ এ কাজ করানোর জন্য একজন বয়স্ক শ্রমিক নিয়োগ করা হলো তাকে দিতে হতো ন্যুনতম ৪ থেকে ৫ শ’ টাকা। শিশু শ্রমিকের মাধ্যমে মজুরি সাশ্রয় করার পাশাপাশি দেশের শিশুশ্রম বিষয়ক আইনকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলেছে এখানকার ইটভাটার মালিকেরা। একই রকম দৃশ্য দেখা যায় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলিতে সম্পূর্ণরুপে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা এমএমবি ইটভাটায়।

এখানে নিয়মিত কাজ করে এমন দুইজন শিশু শ্রমিকের একজন হলো সোনাখুলি মুন্সিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মোঃ শাহিন (৭)। সে ওই এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। অপর জন উপজেলা কাশিরাম ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর হলদিয়া পাড়ার মমিনুল ইসলামের ছেলে নাজমুল (৮)। সেও একই স্কুলের ছাত্র ও শাহিনের সহপাঠী। এরকম অসংখ্য শিশু উপজেলার প্রায় ৪২ টি ইটভাটায় সচরাচর কাজ করছে। অনেক শিশুকে দেখা গেছে ইটভাটার মূল প্লাটফরমের উপরিভাগে কাজ করছে। তাছাড়া অনেকে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেওয়ার কাজও করছে। যা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। অনৈক সময় তারা মাটির গাদা তৈরীর জন্য মাটি ভর্তি ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতেও বাধ্য হয়। এ ব্যাপারে কথা হয় এমএম ব্রিকস এর স্বত্বাধিকারী মোঃ আতিকুল ইসলামের সাথে।

তিনি বলেন, শিশুরা কাজ করছে তাতে কি হয়েছে। তারা কি খুব কষ্টদায়ক কোন কাজে নিয়োজিত। গরীব মানুষ এখানে কাজ করার বিনিময়ে যতটুকু আয় করছে তাতে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতাই তো হচ্ছে। আর এ বিষয়টা তো সাংবাদিকদের দেখার কথা নয়। এগুলো যারা দেখবে তাদের কে গিয়ে বলেন। ফাইভ স্টার ব্রিকস ফিল্ড এর মালিকদের একজন মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, শিশুরা স্কুল ছুটির সময় ইটভাটায় কাজ করে। এতে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া শিশুরা তো এখানকার নিয়মিত শ্রমিক নয়। তাই এ ব্যাপারে কারো নাক গলানোর কোন প্রয়োজন নেই। একটি সূত্র মতে ইটভাটা মালিকদের সাথে কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, শ্রম বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসন ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মোটা অংকের বিনিময়ে আতাত রয়েছে।

এ কারণে ইটভাটা মালিকরা শিশুশ্রম সহ সকল ক্ষেত্রে আইনের কোন তোয়াক্কাই করেন না। পরিবেশ দূষণ, কৃষি জমির মাটি ইচ্ছে মত কেটে নেওয়া, কৃষি জমিতে ইটভাটা গড়ে তুলে আশপাশের জমির আবাদ ধ্বংস করে চললেও কোন কর্তৃপক্ষই তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়না। আর তাই এ ব্যাপারে যারা আইন সম্মত কোন কথা বলতে যায় তাদের সাথে ইটভাটা মালিকরা চরম উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেন। তারা ধরা কে সরা জ্ঞান করে প্রশাসনের সাথে সাথে সংবাদকর্মীদেরও বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেন না। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ জানান, এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে তবে তা এখনও গ্যাজেটভুক্ত না হওয়ায় সে অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।

কিন্তু তারপরও যদি আমরা ইটভাটার বিরুদ্ধে আইন অমান্যের কোন অভিযোগ পাই তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিশেষ করে শিশু শ্রম বিষয়ে। রংপুর বিভাগীয় কল কারখানা পরিদর্শণ দপ্তরের উপ মহা পরিদর্শক সোমা রায় জানান, নির্দিষ্ট করে ইটভাটার নাম বলেন। যেখানে শিশু শ্রমিকেরা কাজ করছে। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তার কাছে অর্থের বিনিময়ে তদারকি না করার অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ কথা সঠিক নয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি শিশু শ্রম প্রতিরোধ করার জন্য।