প্রধান মেনু

 আমন ধান কাটার ধুম, কৃষকের মুখে হেমন্তের হাসি

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ সোনালী ধানের শীষের উপর সকালে শিশির বিন্দু সূর্যের আলোয় চিকচিক করে জানান দিচ্ছে হেমন্ত এসে গেছে। মাঠজুড়ে কৃষকের আমন ধানের ক্ষেত এখন বাতাসে দুলছে। মাঠে মাঠে সোনালী পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ। ধানের আগমনী বার্তায় কৃষক পরিবারে দেখা দিয়েছে আনন্দের ঢেউ। সেই আনন্দ ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার আমন ধান চাষীরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে এ জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৯৬৯৫ হেক্টর আর অর্জিত হয়েছে ৯৯৯৩৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে কয়েক দফা বন্যায় ও অতিবৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের ধান ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়। যার ফলে ২২৭.৭ হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও কৃষক অতিবৃষ্টি এবং অতিগরমে প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে আমান ধান চাষ করেছেন। তবে এ বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়। কিন্তু এ জেলায় কৃষক কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে আমন ধান কাটা শুরু করেছেন।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শ্রমিক কৃষাণ-কৃষাণীদের আমন ধানের কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। কৃষক ধান কেটে আঁটি বেঁধে ভাড় বাঙ্গুয়ায় করে অথবা ভ্যানের মাধ্যমে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির আঙ্গিনায় চলছে আমন ধান মাড়াইয়ের কাজ। শ্রমিদের নতুন ধান কটা মাড়াইয়ের যেমন ব্যস্ততা, তেমনি কৃষক পরিবারের রয়েছে আনন্দ।
অনেক কৃষক জানান, আমনের বীজ তলা ও ধান রোপণের সময় অতিবৃষ্টি হয়েছিল। তবে এতে ফসলের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম গ্রামের কৃষক ওসমান গণি বলেন, আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে তবে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে রোপা আমন কাটা পুরো পুড়ি শুরু হবে কৃষকরা এবার ভালো ফলন পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আটোয়ারী উপজেলার সাতখামার গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দীন জানান, এখনো পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়নি। যার কারণে শ্রমিকের মূল্য কম রয়েছে। ৩৫০ থেকে ৪০০  টাকায় চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তোলা যাচ্ছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের এক প্রান্তিক কৃষক মজিবর বলেন, অল্প পরিমাণে জমিতে আগাম জাতের ধান ছিল। ধানগুলো পেকে গেলে প্রতিদিন কিছু কিছু করে কেটে নিজেই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। যার কারনে তাকে শ্রমিক নিতে হয়নি।
বোদা উপজেলার সর্দার পাড়া গ্রামের কৃষক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই ধানের চারা রোপন করেছিলাম। এ বছর অবহাওয়া খুব ঝামেলা করেছে। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে। আগে ধান রোপনের কারণে ধান আগেই কেটে ঘরে তোলার সুযোগ পেয়েছি। তিনি জানান, ধান কাটার পর ওই জমিতে তিনি সবজি চাষ শুরু করবেন।
এ বিষয়ে বোদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন অর রশিদ বলেন, চলমান করোনায় আমনের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখেছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও আমন ধান কৃষকরা ঘরে তুলবে।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় আশানুরুপ আমন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমেধ্য কৃষক ধান কাটতে শুরু করেছেন। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে কৃষক আমন ধান চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সাথে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছেন। উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদেরকে প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষক ভাল ফলন পেয়ে খুশি হয়েছেন।