আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর ও রাষ্ট্রপতির বাণী

প্রধানমন্ত্রীর বাণী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন: “বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ বৎসর এ দিবসের প্রতিপাদ্য ”Literacy and Multilingualism, বাংলায় যার সারমর্ম করা হয়েছে, ‘বহু ভাষায় স্বাক্ষরতা, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবার আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস উদ্যাপিত হয়।
স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধুর সরকার কর্তৃক প্রণীত সংবিধানের ১৭(গ) অনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করে।বর্তমান সরকার দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষরতা দানের লক্ষ্যে ৬৪টি জেলায় মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমাদের নিরলস ও অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে বিগত এক দশকে স্বাক্ষরতার হার ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা স্বাক্ষরতা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংক্রান্ত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে চাই।
এছাড়াও জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৪ (এসডিজি-৪) অনুযায়ী মানসম্মত ও সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। মায়ের ভাষায় স্বাক্ষরতা অর্জনের পাশাপাশি অন্য এক বা একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ সৃষ্টি করে আমদের শিশু, কিশোর ও যুবদের ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ যুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বহু ভাষায় স্বাক্ষরতালব্ধ জ্ঞান বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি ও ভাষার মধ্যে দৃঢ় মেলবন্ধন তৈরি করে। আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনমান ও দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ অপরিহার্য।
এ বছরের স্বাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য তা অর্জনের দিকটিকেই নির্দেশ করে।সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শতভাগ স্বাক্ষরতা অর্জন ও মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার কাক্সিক্ষত ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস ২০১৯ উদ্যাপন উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু , বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
রাষ্ট্রপতির বাণী: রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস ২০১৯’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। শিক্ষা হলো জ্ঞান অর্জনের মূল ভিত্তি। আর স্বাক্ষরতা অর্জন হলো শিক্ষার প্রাথমিক সোপান। এবারের আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘Literacy and Multilingualism’ অর্থাৎ ‘বহু ভাষায় স্বাক্ষরতা, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা’ চলমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
শিশুরা মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা শিখতে পারলে তা বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে। একই সাথে নতুন নতুন অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনমান উন্নয়ন এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারবে। সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন এবং স্বাক্ষরতা ও দক্ষতা উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। রূপকল্প ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও সপ্তম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
সে লক্ষ্যে সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, শতভাগ উপবৃত্তি বিতরণ, স্কুল ফিডিংসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।এছাড়াও বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সেকেন্ড চান্স প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষরতা প্রদান, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। শতভাগ স্বাক্ষরতা অর্জনে স্বাক্ষরতা কর্মসূচিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
এ লক্ষ্যে আমি সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের সম্পদ। জনমিতি অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের কাংক্ষিত স্তরে পৌঁছাতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে – এ প্রত্যাশা করি। আমি ‘আন্তর্জাতিক সা ক্ষরতা দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ, চিরজীবী হোক।”