আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০১৯” উদ্যাপন উপলক্ষে তথ্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা, ১৩ আশ্বিন (২৮ সেপ্টেম্বর) : “আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০১৯” উদ্যাপন উপলক্ষে তথ্য কমিশন আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম এনডিসি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মিজান উল আলম, প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে – Aceess to Information : Leaving no one behind (“তথ্য সবার অধিকার : থাকবে না কেউ পেছনে আর”)। এবারের মূল স্লোগান – “তথ্য পাবে জনগণ, তথ্যে সবার উন্নয়ন”। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, জনগণকে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে নাগরিক সুবিধা লাভে শিক্ষিত, সচেতন এবং আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রধান তথ্য কমিশনার আরো বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন ও প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনয়ন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে এনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার আইন নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তথ্য অধিকার আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ইংরেজি পাঠ, তথ্য অধিকার (তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত) বিধিমালা, ২০০৯, তথ্য অধিকার (তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত) বিধিমালা, ২০০৯ এর সংশোধনী, তথ্য অধিকার (তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা) প্রবিধানমালা, ২০১০, তথ্য অধিকার (তথ্য প্রকাশ ও প্রচার) প্রবিধানমালা, ২০১০, তথ্য অধিকার (অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত) প্রবিধানমালা, ২০১১ জারি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তথ্য সরবরাহের জন্য এ পর্যন্ত সমগ্র দেশ থেকে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সর্বমোট ৪২ হাজার ১৩৮ জন দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯০৬ জন সরকারি দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য অধিকার বিষয়ে অনলাইনে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। তথ্য কমিশন কর্তৃক সর্বমোট ৩ হাজার ১৭১টি প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ২৬টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৪৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৬১টি জেলার ৪৬৭টি উপজেলায় জন অবহিতকরণ সভা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
২০১০ সাল হতে গ্রামীণ ফোন, টেলিটক, রবি গ্রাহকদের Text message, sms প্রেরণ এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টিভি শো এর মাধ্যমে তথ্য অধিকার আইন প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিণ্ট মিডিয়ায় এ আইন সম্পর্কে ব্যাপকভাবে গণসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে টক শো, আলোচনা সভা, ডকুমেন্টারি, নাটিকা ও খবর পরিবেশন করা হয়েছে। তথ্য কমিশিন এটুআই প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং ডিনেটের সহায়তায় তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ বিষয়ে অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম চালুকরণের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
তথ্য কমিশন কর্তৃক “আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০১৯” উদ্যাপন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ সকাল ৯.১৫ ঘটিকায় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি, শাহবাগ হতে জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালি এবং র্যালি শেষে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ।
এ উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সকল জেলা প্রশাসক দিবসটি উদ্যাপনের নিমিত্তে স্ব স্ব জেলায় বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা ও তথ্য মেলার আয়োজন করছে। বিভিন্ন এনজিও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা অনুষ্ঠান করছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি বেতার, এফ এম রেডিও, ডিবিসি নিউজ-সহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা, টক শো ও তথ্য অধিকার সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি প্রচার করবে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া থেকে সুশীল সমাজের নেতৃত্বে প্রতিবছর ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে International Right to Know Day হিসেবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিবসটিকে International Day for Universal Access to Information হিসেবে পালন করে আসছে। এর পর থেকে তথ্য কমিশন দিবসটিকে বাংলায় ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’ হিসেবে নামকরণের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।