প্রধান মেনু

অর্থাভাবে জমি অধিগ্রহণের টাকা দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ অর্থাভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া যাচ্ছে না নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক সম্প্রসারণ কাজে অধিগ্রহণ হওয়া জমির মালিকদের। এদিকে কয়েক দফায় ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের দাবীতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুদ্ধ মানুষরা। তবে সর্বশেষ কর্মসুচীতে সংসদ সদস্য প্রয়োজনীয় আশ্বাস দেওয়ায় কর্মসুচী প্রত্যাহার করে নেন আন্দোলনকারীরা। নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক সম্প্রসারণ ও মজবুতিকরণ কাজের জন্য ২২৫কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাশিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।

জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১০ কোটি টাকা জমি অধিগ্রহণের জন্য রাখা হলেও এটি ১৯৮২সালের অধ্যাদেশে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের জমির মুল্য বাবদ দেড়গুণ হিসেবে পড়ে কিন্তু ২০১৭সালের জমি অধিগ্রহণের নতুন নীতিমালায় প্রকল্পের জমির মালিকরা তিনগুণের হিসেবে আসায় পর্যাপ্ত অর্থ পায়নি জেলা প্রশাসন। সড়ক সম্প্রসারণে ৫৪দশমিক ৬১৫ একর জায়গা অধিগ্রহণের আওতায় রয়েছে। জেলা প্রশাসন সুত্র বলছে, প্রত্যাশিত সংস্থা কর্তৃক প্রদেয় ১১০ কোটি টাকার মধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রথম প্যাকেজে (এলএ কেস ৯/১৭-১৮) ৬১কোটি টাকা বিতরণের হিসেবে রয়েছে। বাকি রয়েছে ৪৯ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় প্যাকেজে (এলএ কেস ১১) ৭৩কোটি টাকার তালিকা প্রণয়ন করা হলেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না আসায় এটি প্রদান করা যাচ্ছে না। তৃতীয় প্যাকেজে (এলএ কেস ১৩) ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা করা হয় ৭৪ কোটি টাকা এবং চতুর্থ প্যাকেজের (এলএ কেস ০১/১৮-১৯) সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। প্রথম ফেইজের ৪৯কোটি টাকা রয়েছে যা দিয়ে দ্বিতীয় ফেইজের ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে দেয়া যাচ্ছে না। তাদের দিতেও আরো ২৪কোটি টাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ঠ দফতরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। নতুন ভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া শুরু হবে। আমিও চাই টাকা যেন দ্রুত পরিশোধ করা যায় জমি মালিকদের।

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩১৩কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। সেটি পাস হলে ক্ষতিপূরণের জন্য জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হবে। এদিকে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবীতে কয়েক দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন ক্ষতিগ্রস্থরা। কুন্দপুকুর ইউনিয়নের সুটিপাড়া এলাকার হাসানুজ্জামান বলেন, টাকার জন্য আমরা শুধু ধরনা দিচ্ছি। এর আগেও আন্দোলন করেছি। তখন বলা হয়েছিলো ১৫দিনের মধ্যে টাকা প্রদান করা হবে কিন্তু দশ মাস হয়ে গেলো। আজো পাইনি।

সওজ সুত্র জানায়, বর্তমানে ১৮ফিটের সড়কটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩৪ফিটে উন্নিত হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ(একনেকে) ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর-নীলফামারী আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৫৭০) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পটি পাস হয় ২০১৭সালের নভেম্বরে। সাড়ে পনের কিলোমিটারের এই জনগুরুত্বপুর্ণ সড়কটি ২০১৮সালের ২আগষ্ট দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। চলতি ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় সীমা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটিকে দেয়া হলেও এনিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্স এর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, আমার অংশে সাড়ে সাত কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশে জমি বুঝে দেয়া হয়নি।

জমি অধিগ্রহণ থমকে যাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারছি না। ইতোমধ্যে প্রকল্প ব্যয় অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আমরা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি কাজটি নিয়েও শংকা রয়েছে। সবশেষ আন্দোলন কর্মসুচীতে নীলফামারী-০২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর বলেন, এটি একটি বড় কাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ভরসা রাখেন। উনি আপনাদের হতাশ করবেন না। প্রকল্প অনুমোদন হওয়া মাত্র আপনাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন।