অতিথি পাখি গাংনীর মরা নদীকে দিয়েছে নতুন সৌন্দর্য
মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃঅতিথি পাখির বিচরণ মেহেরপুরের গাংনীর মরা নদীকে দিয়েছে নতুন সৌন্দর্য। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কুয়াশাছন্ন সকালের সোনালি রোদে সূর্যস্নান সেরে দল বেঁধে চষে বেড়ায় নদীর এপার থেকে ওপারে। উড়ে বেড়ানো আর কলকাকলিতে মুখরিত নদী পাড়ের এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে নয়নাভিরাম দৃশ্য। জলে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করা, শামুক খাওয়া, জলকেলি, খুনসুটি এবং কিচিরমিচির শব্দে নদী পাড়ের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে। আর পাখি প্রেমীদের সহজেই নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে।
গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর নাম মাথাভাঙ্গা । এর একটি অংশ মরা নদী হিসেবে পরিচিত। আত্মরক্ষার অব্যাহত প্রচেষ্টায় প্রতিবছরই শীতকালে উত্তরাঞ্চল থেকে পাখিরা এখানে আসে। মরা নদীর আশেপাশে হাজারো পাখির বিচরণে সৃষ্টি হয়েছে এক ভিন্ন পরিবেশ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নাম না জানা এসব পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত গোটা এলাকা। প্রতিদিনই আশেপাশের লোকজন পাখি দেখতে আসে নদী পাড়ে । নদীর ভেসে থাকা কচুরিপানার উপরেই আবাস গেড়েছে পাখিরা।
সচরাচর যেসব পাখি দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- জলময়ূর, ডুবুরি, খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, শামুকভাঙা বা শামুক খোলা, কালো কুট, কাদা খোঁচা বা চ্যাগা, জলের কাদাখোঁচা পাখি প্রভুতি। দেখা যায় সরালি ঝাঁক বেঁধে উড়ছে সাই সাই করে। আবার পরক্ষণেই ঝপাৎ করে বসে যাচ্ছে জলাধারে। নিজেদের খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত কেউবা আবার আপন মনে সাঁতার কাটছে জলাশয়ের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। পরক্ষণেই উড়াল দিচ্ছে শূন্যে। জলাশয় তীরবর্তী গাছগুলোকে দুগ্ধধবল বক ঢেকে রেখেছে নিজেদের ডানার নীচে।
অতিথি পাখি দেখে সময় পার করে এখানকার শিশুরা। পাখি নিয়ে তাদের কৌতুহলের শেষ নেই। মহাম্মদপুরের সিরাজুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা পাখিগুলোকে অতিথির মতই সমাদর করেন। শিকারীদের হাত থেকে পাখি রক্ষায় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়াই স্থানীয়রা স্বোচ্ছার। তবে পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা গেলে মাথাভাঙ্গা মরা নদীর এই অংশটি হতে পারে পাখিপ্রেমিদের মনোরঞ্জনের অন্যতম স্থান। এমনটি মন্তব্য স্থানীয়দের। গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রভাষক ও পরিবেশবীদ রমজান আলী জানান, পাখি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না-এরা অন্যান্য প্রাণির উপকারেও আসে।
প্রকৃতির বনায়ন সৃষ্টিতে পাখি পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকৃতি বান্ধব এইসব পাখি শুধু নিজেরা বাঁচতে আসে না। এরা জলজ পোকা, ইদুর, কখনো কখনো ধানের পোকা খেয়ে কৃষকের উপকার করে থাকে। পাখি মানুষের পরমবন্ধু। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল জানান, অতিথী পাখি শুধু নয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী সব পাখিই শিকার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় মরানদীসহ বিভিন্ন এলাকায় পাখি শিকার বন্ধ করা হয়েছে।