অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন

অটোয়া (কানাডা) ২২ ফেব্রুয়ারি : মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়। দিবসের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে হাইকমিশনারের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ হাউজে সকালে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয় এবং একই সাথে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। পরিশেষে শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সকল ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। একই সাথে, হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চার নেতা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহানি মা বোনদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। করোনা মহামারির কারণে ভার্চুয়ালি আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বনামধন্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের অন্যতম সদস্য ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আবদুস সালাম বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ ও টেরিটোরির প্রবাসী বাংলাদেশি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ভিডিও বার্তা প্রদর্শন শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
সভাপতির ভাষণে হাইকমিশনার বলেন, এ বছরের শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্যপুর্ণ। এ বছরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদ্যাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় তথা বাঙালি জাতিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তা ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ঐতিহাসিক দলিলে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো কালে কালে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। এতদঞ্চলের শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের স্বার্থসুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি অর্জনের পিছনে রয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজবন্দী হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় থাকাকালে রাতের অন্ধকারে সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা তাঁর সাথে দেখা করেন এবং এ সময় বঙ্গবন্ধু একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত দেন।
তিনি সকলকে অবহিত করেন যে, হাইকমিশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বাংলাভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির পাশাপাশি অন্যান্য সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে কাজ করবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি কানাডায় অবস্থিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা ও শিল্পীবৃন্দের এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
পরে একটি ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ভারত, শ্রীলংকা ও ফ্রান্সের শিল্পীগণ নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষায় গান, নাচ ও কবিতা পাঠ করেন। বিভিন্ন দেশের ও ভাষার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার যে মূল লক্ষ্য অর্থাৎ সকল ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান ও লালন করার বিষয়টি উঠে আসে।