অগ্নিকান্ড- ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে — গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘গাফিলতির েকারণে দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকা- ঘটেছে। যারা ঘটনার সাথে জড়িত, যাদের কারণে এই নির্মম হত্যাকা-, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আজ সকালে রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকা-ের ঘটনা অবহিত হওয়ার পর থেকে সরাসরি বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, দফতরসহ সকলের সাথে যোগাযোগ রেখে তাৎক্ষণিকভাবে যেখানে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছেন’। মন্ত্রী বলেন, এফ আর টাওয়ার ভবনটিকে ১৮তলা ইমারত নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৯৯৬ সালে। ২০০৫ সালে এসে রাজউকে একটা কপি দাখিল করে বলা হয় এটা ২৩ তলা হয়েছে। তদন্তে দেখা যায়, যে কপি ভবন কর্তৃপক্ষ দাখিল করেছে তার সমর্থনে রাজউকের রেকর্ডে কোথাও কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। এতে তদন্তে রিপোর্টে ধরে নেয়া হয় ২৩ তলার যে নকশা ভবন কর্তৃপক্ষ দাখিল করেছে তা সঠিক নয় এবং মূল অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। সে সময়ে রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা ছিলেন, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি’।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি, তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। রাজউক এর পক্ষ থেকেও একই রকম একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে’। তদন্ত কমিটির কার্যপরিধির বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি এই ভবনের প্ল্যান অনুমোদনের প্রক্রিয়ার ভেতরে কোনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা, অনুমোদিত প্ল্যানের বাইরে বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে এর সাথে কারা জড়িত, ডেভেলপার, ভবন মালিক এমনকি আমাদের সংস্থার কেউ জড়িত থাকলে তার সম্পর্কে প্রতিবেদন দেবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার সাথে সাথে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেই হোন না কেন, যত শক্তিশালীই হোন না কেন, এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা যারা টাকার লোভে ঘটায়, তাদের আইনের আওতায় এনে যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, দ্রুতগতিতে আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবো। যারা অনুমোদন ব্যতীত এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ ফৌজদারি মামলা এবং প্রয়োজনে তাদের নির্মিত
ভবনের বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলা হবে’। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহরে একেবারে অনুমোদনহীন বা অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনেক ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে, আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ বিষয়গুলো বিশদভাবে খতিয়ে দেখছি এবং আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অতীতের ঘটনাগুলোও খতিয়ে দেখবো, অতীতের দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে কমিটি কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, কারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে’। এর আগে মন্ত্রী বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা-ে বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রহমান, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।