প্রধান মেনু

২ শিশু মায়ের হেফাজতে আরও চার সপ্তাহ রাখার নির্দেশ

বাবার হেফাজতে থাকা মাগুরার দুই ভাই মিয়া মো. সাদিক সাদমান লুব্ধক (৯) ও মিয়া মো. সালিম সাদমান ধ্রুবকে (১২) মায়ের হেফাজতে আরও চার সপ্তাহ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খাইরুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২৫ জুন ওই দুই শিশুকে ৪ জুলাই পর্যন্ত তারা মায়ের কাছে থাকার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তবে এ সময়ে বাবা সন্তান দুটির দেখাশোনা করার সুযোগ পাবেন বলেও আদালতের আদেশে বলা হয়। আদালতে শিশু দুটির বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস বল।

মায়ের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সঙ্গে ছিলেন একেএম রিয়াদ সলিমুল্লাহ।মাগুরার মেহেদী হাসান একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন আর রাজশাহীর কামরুন্নাহার মল্লিকা একটি প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। ২০০২ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন তারা। সংসারে আসে দুই ছেলে লুব্ধক ও ধ্রুব। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করা হয়। বিয়ের ১৫ বছরের মাথায় গত বছর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। দুই সন্তান রয়ে যায় বাবার কাছেই। তবে বাবা তাদের রাখেন তার বোনের (সন্তানদের ফুফু) কাছে মাগুরায়। সেখানেই ভর্তি করানো হয় স্কুলে। মেহেদী থাকেন ঢাকায়।

এই এক বছরে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি মাকে। মল্লিকার অভিযোগ, সব রকম চেষ্টা করেও সন্তানের ফুফুর কারণে ছেলেদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্ট ২৫ জুন শিশু দুটিকে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও বাবাকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সন্তানকে কেন মায়ের হেফাজতে দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। শিশু দুটিকে ২৫ জুন আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ ছাড়া বাবা-মা, মামা, নানি ও ফুফুসহ আত্মীয়স্বজন আদালতে হাজির হন। শুনানির একপর্যায়ে শিশু দুটির বক্তব্য শুনতে চান আদালত। ধ্রুব আদালতকে বলে, আমরা আর কিছু চাই না। বাবা-মাকে একত্র দেখতে চাই। পরে লুব্ধক বক্তব্য দেয়। মায়ের পক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতকে বলেন, আজকে একটা বছর ধরে মা তার সন্তানকে দেখতে পাচ্ছে না।

কোর্টে হাজির করার পরও শিশুর ফুফু মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দিয়েছেন। এ সময় তিনি সন্তানদের সঙ্গে মায়ের কথা বলার সুযোগ চান। আদালত অনুমতি দিলে মা ছেলেদের কাছে এগিয়ে যেতেই দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। ছেলেরাও মাকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকে। বড় ছেলে তখন হাত বাড়িয়ে বাবাকেও ডাকতে থাকে। ছেলে বলতে থাকে, ‘বাবা তুমি এসো। তুমি আমার কাছে এসো। আম্মুকে সরি বল। এ সময় বাবাও এগিয়ে এলে আদালতের ভেতর এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।

বাবা-মা ও তাদের সন্তানদের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নার দৃশ্য দেখে আদালতের বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সবার চোখে পানি চলে আসে।’ এ সময় আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক আবার ওই শিশুদের ডেকে নেন। সঙ্গে মা-বাবাকেও কাছে ডাকেন। আদালত বলেন, ‘এ দৃশ্য দেখেও কি আপনাদের মন গলে না। আপনারা কি সন্তানের জন্যও নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবেন না। এ সময় শতাধিক আইনজীবী দাঁড়িয়ে সমস্বরে সন্তানদের বিষয়টি চিন্তা করে বাবা-মাকে মেনে নেয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে সন্তানদের চাওয়া অনুযায়ী তাদের দাম্পত্যজীবন যাতে বজায় থাকে সে রকম একটি আদেশ দেয়ার দাবি জানান।