১৫ দিন ধরে বন্ধ ২৭ কমিউনিটি ক্লিনিক, সেবা হতে বঞ্চিত গ্রামের মানুষ
চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্দোলনের কারণে ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ঈশ্বরদীর ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেসব মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন হঠাৎ ১৫ দিন ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অপরদিকে, ঈশ্বরদীর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) বললেন, তাদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের সুফল না পাওয়া পর্যন্ত তারা চাকরিতে যোগ দিবেন না। ঈশ্বরদীর মানিকনগর গ্রামের সালমা খাতুন (৫০) বলেন, আমরা গবীর মানুষ এখানে মাঝে মধ্যেই এসে চিকিৎসা সেবা নিতাম কিন্তু ১৫ দিন ধরে এই ক্লিনিক খুলছেই না।
আমরা এখন কোথায় যাবো আব্দুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরেই এই ক্লিনিক বন্ধ। লোকজন চিকিৎসা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছে। একটানা এতোদিন বন্ধ থাকায় মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। ঈশ্বরদীর সিএইচসিপিরা জানান, জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে তারা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাদের একটিই দাবি চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর। এই দাবিতে ১৫ তারিখের পর থেকে পর্যায়ক্রমে পাবনা সিভিল সার্জেনের কার্যালয়ের সামনে, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ও রাজশাহীতে বিভাগীয় পর্যায়ে আন্দোলন করে আসছি। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি থেকে সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান শুরু করেছি।
দাশুড়িয়া মারমী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আলেয়া ফেরদৌসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের আন্দোলনে ঢাকায় আছি। সরকার নানাভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পর্যন্ত চাকুরি রাজস্বকরণ করা হয়নি। মাস গেলে আমাদের বেতন ভাতা সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া বেতন বৃদ্ধি বা অন্য কোনো ভাতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ সপ্তাহে আমরা ছয়দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এর আগে এই দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সিএইচসিপি ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি শরিফ আহমেদ রনোর সঙ্গে গতকাল বুধবার সকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চাকুরি রাজস্বকরণের দাবিতে এখন ঈশ্বরদীর ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছে। এখানে সারাদেশ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা এসেছেন। আমাদের দাবি চাকরি রাজস্বকরণ, বেতন স্কেল ১৪তম গ্রেড থেকে ১১ তম গ্রেডে নেওয়া এবং উচজ্ধসঢ়;চতর প্রশিক্ষণ দিতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউ স্থাপন করা। তিনি আশংকা প্রকাশ করে আরো বলেন, আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে একটি অনিশ্চয়তার মধ্য দিনাতিপাত করছি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। আবারো কখনও সরকার পরিবর্তন হলে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিতে পারে তখন আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে। জনগণের দ্বারগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এই সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবার এই কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম শুরু করে। বিনামুল্যে ৩০ ধরনের ঔষধ বিতরণ, কিছু ক্লিনিকে প্রসবসেবাসহ নানান ধরনের সেবা দেয়া হয়।