১৫ মাসের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দায়িত্ব নিলেন রসিক মেয়র বুলবুল
অবশেষে ২৩ মাস পর দায়িত্বগ্রহণ করলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মেয়রকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিল ও কর্মচারির পক্ষে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার কর্মস্থলে কিছুক্ষন কাটান।দায়িত্বগ্রহণের পর মেয়র উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান বিগত ২বছরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের যে অবচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমি কাউন্সিলরদের নিয়ে আগামী ১৫মাসের মধ্যে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমি নির্বাচিত হয়েছি এই অল্প সময়ের মধ্যে তা পুরণ করার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন নির্বাচনের সময় আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। যার একটি শ্লোগান ছিল, গ্রীণ সিটি, ক্লীন সিটি, হেলথ সিটি, ইডুকেশন সিটি । এই সিটি করপোরেশনের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কথা দিয়েছিলাম। সেই চেষ্টা করে যাবো। তিনি বলেন আমার প্রথম চ্যালেন্স হলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে এইটি সৌহাদ্যপুর্ন অবস্থা সৃষ্টি করা। বর্তমান যে স্বেচ্ছাতারিতা সেই অবস্থাকে দুর করে গণতান্ত্রিক সৌহাদ্য পুর্ন অবস্থা যেনো তৈরি করতে পারি সেই চেষ্টা করবো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগে ১৬মাস দায়িত্ব পালনকালে সরকারীভাবে যে সহযোগিতা পেয়েছি আগামীতেও পাবো।সেজন্য তিনি সবাত্মক চেষ্টা করবেন বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়াও তিনি বলেন স্থানীয় সরকারকে অবমাননা করে কেউ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় থাকতে পারে না।এর আগে গত রোববার তিনি উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে রাসিকে দায়িত্ব নিতে যান। কিন্তু মেয়রের কক্ষ তালা বন্ধ থাকায় তিনি প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েন। পরে মেয়রের রুমের তালা ভেঙ্গে তিনি তার অফিসে বসেন। কিন্তু তার অফিসে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত ওই আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিকেল ৩টার মধ্যে তার বরখাস্তাদেশ রাসিকে ফ্যাক্স যোগে এসে পৌছায়। পরে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মেয়রের ব্যক্তিগত চেম্বার ভাংচুর করে। যদিও মেয়র রাসিক থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলেন এই আদেশ আমি মানিনা। এরপর মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বুলবুল। রিট আবেদনের শুনানি শেষে বুলবুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির আগে নাশকতা, সহিংসতা, জানমাল ও সম্পদ বিনষ্টে ভয়াবহতা এবং বিস্ফোরক আইনে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে নগরীর চার থানায় অন্তত ৯টি মামলা হয়। এসব মামলা কাঁধে নিয়ে মেয়র বুলবুল ৫ জানুয়ারির পর আত্মগোপনের চলে যান। এরই মধ্যে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে চারটি মামলার চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেন। এরপর তৎকালীন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমেদ বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন। এতে মেয়র বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের কথা বলা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৭ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাকে বরখাস্ত করে।দীর্ঘ আইনী লাড়াইয়ের পর গত ২৭ মার্চ মঙ্গলবার উপ-সচিব মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে স্ব-পদে বহালের নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে জন্য ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম শরীফ উদ্দিন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ তাকে স্বপদে ফেরাতে আদেশ দেন। এ সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়েছে।
(মোঃশামসুল ইসলাম, রাজশাহী)