স্কুল, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন রাজস্ব খাত থেকে প্রাপ্তির দাবী
শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,২৪আগষ্ট ২০২০ঃ নন-এমপিও ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহ কাল্টেরেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি, শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, শিক্ষকদের বেতন জেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাত থেকে পুরন ও স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়নসহ নানা কারণে ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপি কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী সমাজ অস্থির হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন ও মানবতার জননী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সাহসী ভুমিকায় অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষা ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সকল জেলা প্রশাসক নিজ কর্মস্থলে কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ তথা জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ নামে ৫৪ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সফলতার দিক থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।
ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে এই প্রতিষ্ঠান আপোষহীন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যে কারণে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ ও সর্বোচ্চ জিপিএ ৫.০০ নিয়ে সকল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ জেলার মানসম্মত ও সর্বোচ্চ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ২২ জন শিক্ষক ও কর্মচারী জেলা প্রশাসনের অধীনে লিখিত মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে আসার পরেও এ সকল শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ তাদের সময় উপযোগী বেতন-ভাতা না পেয়ে নামমাত্র বেতনে দিনাতিপাত করছে।
সূত্রে জানা যায়,২০১৫ সালের ডিসি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে প্রতিটি জেলায় একটি করে কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং তাদের একটি নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও নিজস্ব নীতিমালা আজ অবদিও প্রণিত হয়নি। যে কারণে এ প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রতিনিয়তই বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার শিকার।
বিষয়গুলো পয়েন্ট আউট করতে গেলে অনেকটা এরকম-১.বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছে যৎ সামান্ন যা অতি দুঃখের ও পরিতাপের বিষয়।২. বাংলাদেশে আশির দশক থেকে কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজসহ এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট বেতন গ্রেডে আসতে পারেনি কোনো শিক্ষক। ৩. সকল শিক্ষক এবং কর্মচারীদের চাকরি সম্পূর্ন অস্থায়ী এবং কোন শিক্ষক যদি দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যধিতে অসুস্থ হয়ে থাকে তাহলে চাকরি থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে যেটা ঐ শিক্ষক এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগজনক।৪. শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির মাধ্যমে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফান্ড ছাড়া বেতনের কোনো উৎস নেই। ৫. বোনাস-ভাতা, ফান্ড বা অবসরকালীন গ্রাচ্যুইটি/পেনশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশের মাত্র কয়েকটি কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ ব্যতীত প্রায় সকল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ নামমাত্র বেতন পাচ্ছেন। ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক নিশাত আনজুমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পান। ঝালকাঠি কালেক্টরেট স্কুলের সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় রায়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনিও মাত্র ৫০০০/- টাকা বেতন পান। এছাড়াও নড়াইল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি মাত্র ৩৫০০/- টাকা সম্মানী পায়।
জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ, গোপালগঞ্জ এর সহকারী শিক্ষক উম্মে আসমা বলেন আমি মাত্র ৫০০০/- টাকা বেতন পাই যেটা খুব লজ্জাজনক। ভোলা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার জানান লিখিত ভাইবা এবং ডেমো ক্লাসের মাধ্যমে চাকরি পেয়ে আমরা বেতন পাচ্ছি না। জামালপুর কালেক্টরেট এর শিক্ষকদের সাথে আলাপ করা জানা গেছে তারা এখনো পর্যন্ত কোনো সম্মানী পাচ্ছেন না।
জানা গেছে,গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে বিভাগীয় কমিশনার সন্বন্নয় সভায় সভাপতিত্ব করেন মাননীয় সচিব ফয়েজ আহম্মদ এবং উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে, কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনার জন্য ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এর আদলে কালেক্টরেট বোর্ড গঠন করা হবে । উক্ত সভার একটি প্রবিধান তৈরি হয়ে আছে কিন্তু তার কোন ফলাফল আমরা দেখছি না।
অপ্রাপ্তি ও অনিশ্চয়তার কারণে অনেকে শিক্ষক-কর্মচারীগন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, হতাশাগ্রস্থ হচ্ছেন। আর এই বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনাধীন। একজন শিক্ষক হলেন জাতির কারিগর। কিন্তু সেই শিক্ষক যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা হতাশাগ্রস্ত থাকেন তাহলে সেই শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীরা কতটা উপকৃত হবে? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটা শিখতে বা জানতে পারবে? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। তবে ঝিনাইদহ কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকসহ সকল কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকগন আশাবাদী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতদের জন্য তিনি পরবর্তী ডিসি সম্মেলন-২০২০ এ অবশ্যই যুগোপযোগী ও যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে কোনো কার্পন্য করবেন না। যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জড়িত সকলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি হয়।
এ বিষয়ে ‘ঝিনাইদহ কাল্টেরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সুষেন্দু কুমার ভৌমিক বলেন,কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ এ একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক কর্মরত আছে এবং মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করছি অতিদ্রুত শিক্ষকদের জন্য জনবল ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রনয়ণ এবং রাজস্ব খাত থেকে বেতন দেওয়ার জন্য।