প্রধান মেনু

সিউইড চাষ বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা সিউইডের ভ্যালু এডেড পণ্যের ব্যবহার জনপ্রিয় করতে হবে

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে “বাংলাদেশ উপকূলে সিউইড চাষ : সম্ভাবনা ও অগ্রগতি” শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা দেশের বঙ্গোপসাগরকে সামুদ্রিক মৎস্য, চিংড়ি ও কাঁকড়া সম্পদ ছাড়াও ব্যাপক পুষ্টিমানসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ও রপ্তানিযোগ্য খাদ্য হিসেবে সমুদ্রের জলজ উদ্ভিত সিউইড বা সমুদ্র-শৈবালের অফুরন্ত আধার বলে উল্লেখ করেছেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্র- শৈবাল নিয়ে যখন প্রাথমিক গবেষণায় নিয়োজিত, তখন এশিয়ার দেশগুলো ৮৫ ভাগ শৈবাল উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর অর্থোপার্জন করে যাচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২৬ মিলিয়ন টন সিউইড চাষ হয়ে থাকে। অধিক সমুদ্র শৈবালের চাষকারী দেশের মধ্যে চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, রাশিয়া, পর্তুগাল, তাইওয়ান উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালিত গবেষণায় বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত ১১৭ প্রজাতির শৈবালের খোঁজ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১০টি প্রজাতি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাল, সবুজ ও বাদামি রঙের এই সমুদ্র-শৈবালগুলো দেশের উপকূলীয় আদিবাসীরা যুগযুগ ধরে সবজি ও সালাদ হিসেবে খেয়ে আসছে এবং বিদেশেও এর নুডুলস, সুপ, চা-কফি ছাড়াও ডেইরি, ওষুধ, টেক্সটাইল ও কাগজশিল্পে আগার, ক্যারাজিনান কিংবা জেল জাতীয় দ্রব্য তৈরিতে এবং জমির সার, প্রাণিখাদ্য ও লবণ উৎপাদনেও বহুল ব্যবহৃত পণ্য।

খাদ্য হিসেবে বাংলাদেশে সমুদ্র শৈবালের জনপ্রিয়তা না থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ায় এর বিশাল বাজার রয়েছে। বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত এই জলজ সম্পদের চাষাবাদ এবং ব্যবহার কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইঋজও) গবেষণার পাশাপাশি কক্সবাজারের টেকনাফসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং বাঁকখালীর মোহনায় “বাংলাদেশ উপকূলে সিউইড চাষ ও সিউইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা প্রকল্প” বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

এ দেশের জলবায়ূতে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৬ মাস সিউইডের চাষ করা সম্ভব। উপকূলীয় এলাকায় ১৫দিন পর পর এক বর্গমিটার জায়গায় ৬০-৮০ কেজি পর্যন্ত ভেজা শৈবাল উৎপাদন করা যায়, স্থানীয় বাজারে এর প্রতি কেজির সর্বনিম্ন মূল্য ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রয় করে অনায়াসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় করা সম্ভববপর বলেও আলোচকরা জানান।

মাত্র ১২০০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি আনুভূমিক জাল দিয়ে ৬ মাসে একজন জেলে সহজেই ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা উপার্জন করতে সক্ষম। সেন্টমার্টিন, ইনানী ও বাঁকখালী এলাকার জনগণ সাগরে জন্মানো এই সিউইড সূর্যতাপে শুকিয়ে পার্বত্য এলাকার উপকূলীয় বাজারে প্রতিমণ ৩ থেকে ৫ হাজারে বিক্রি করে বলেও কর্মশালায় জানানো হয়। তারা সিউইডের ভ্যালু এডেড খাদ্যপণ্যের প্রয়োজনের ওপরও জোর দেন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম ম-ল, যুগ্মসচিব তৌফিকুল আরিফ (ব্লু-ইকোনমি), মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মোঃ রাশেদুল হক প্রমুখ।

এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুজ্জামান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন। মৎস্য প্রতিমন্ত্রী সিউইড আমাদের দেশে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নতুন উদ্যোগ এবং শুধু কক্সবাজারস্থ উপকূল নয়, দেশের অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলেও এর চাষকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

এতে উপকূলীয় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমুদ্র শৈবালের আধুনিক চাষাবাদ সংক্রান্ত উদ্ভাবিত একটি প্রযুক্তিও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের হাতে তুলে দেন।