প্রধান মেনু

সাভারে ২০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান জঙ্গি আস্তানায়

সাভার পৌর এলাকার মধ্যগেণ্ডা মহল্লার জঙ্গি আস্তানায় বিশ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান সমাপ্ত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

এসময় জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় জিহাদি বই, ল্যাপটপসহ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি। আস্তানার ভেতর থেকে একে একে দশটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর মধ্যে ৭টি শক্তিশালী গ্রেনেড ও তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এছাড়া যে ভবনটিতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল তার মালিক সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। কিন্তু কোন জঙ্গিকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট সাভারের জঙ্গি আস্তানায় পৌঁছে। বেলা ১১টা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মহিবুল ইসলাম খানের  নেতৃত্বে মূল অভিযান শুরু হয়।

এসময় অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে মাইকিং করে আশেপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়। বেলা  ১১টায় অভিযান শুরু হয়ে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে।

এসময় বাড়িটির ভেতর থেকে একে একে দশটি বোমা নিষ্ক্রিয় করেন বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। সর্বশেষ গ্রেনেডটি বিস্ফোরণের সময় পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। দুপুর তিনটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান জানান, মাত্র ১৫ দিন আগেই ওই এলাকায় জঙ্গি বিরোধী সমাবেশ করেছি। এরই মধ্যে এতবড় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান আমাকে হতবাক করেছে।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এ জন্য তিনি জঙ্গি মোকাবিলায় সমাজের সর্বস্তরের লোকজনকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ হয়েছে। সেখানে যে দশটি বোমার বিস্ফোরণ হয়েছে এর মধ্যে ৭টি গ্রেনেড ও তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল।

এছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক সাকিবকে আটক করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, দুইজন মহিলাসহ ৭/৮ জন লোক অত্র এলাকায় হালিমের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে কয়েক মাস ধরে একটি কসমেটিক্সের কারখানা করে তারা বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থেকেছে। তারা করো সঙ্গে তেমন মেলামেশা করেনি। এখন আমরা বুঝতে পারলাম তারা জঙ্গি ছিল।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের দুটি দল ও ঢাকা জেলা পুলিশের শতাধিক সদস্য পৌর এলাকার মধ্যগেণ্ডা মহল্লার সাকিবের নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় সেখান থেকে বেশকিছু বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, জিহাদি বই ও ল্যাপটপ উদ্ধার করে। ফ্ল্যাটটিতে খাওয়ার জন্য গরম ভাত ও তরকারি চুলায় ছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গাঢাকা দেয় জঙ্গিরা।

তবে ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে থাকা বড় একটি ব্যাগ ছিল সে ব্যাগ থেকে বোমাগুলো উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। অপর একটি রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল সে রুমটিতে ভেতরে জঙ্গি সদস্যরা অবস্থান করতে পারে বলে ধারণা করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিন্তু সে রুমে কোনো জঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পৌর এলাকার নামাগেন্ডা মহল্লার আনোয়ার মোল্লা নামের এক ব্যক্তির পাঁচ তলা ভবনের নিচ তলায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি দল ও ঢাকা জেলার প্রায় শতাধিক পুলিশ ওই বাড়িতে ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেও কোনো জঙ্গির সন্ধান পায়নি।

তবে রিমু আক্তার নামে এক মহিলাকে সন্দেহ হওয়ায় তার দুই শিশু সন্তানসহ স্থানীয় কমিশনারের জিম্মায় রেখেছেন। ওই মহিলার স্বামী মনির হোসেন জঙ্গি সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিয়াউর রহমান খান
সিনিয়র রিপোর্টার/জাতীয় গোয়েন্দা সংবাদ