প্রধান মেনু

শৈলকুপায় শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন : চার মাসেও ব্যবস্থা নেয়নি যশোর শিক্ষা বোর্ড

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ০১ অক্টোবর ২০১৮ঃ  ঝিনাইদহে শৈলকুপার হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চলমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিলের চার মাস অতিবাহিত হলেও ব্যবস্থা নেয়নি বোর্ড কর্তৃপক্ষ। আর এই সুযোগে সংখ্যালঘু প্রধান শিক্ষকের সন্তানদের গুম করার হুমকি দিচ্ছে বলে সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন ঐ প্রধান শিক্ষক। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে তোফাজ্জেল আহম্মেদ মনোনীত হওয়ার পর থেকেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি ও হুমকি প্রদান, শিক্ষকগণকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করা, ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া এবং দুইটি চেকের পাতা জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অপকর্মের লিখিত অভিযোগ রয়েছে।

২৩ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিঃ তারিখে সভাপতি কর্তৃক শিক্ষকগণকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে ২৪ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিঃ তারিখে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে অভিযুক্ত সভাপতির বিচারের জন্য তার বাড়ির সামনে অবস্থান কর্মসুচি গ্রহন করে আন্দোলন করতে থাকে। পুলিশের উপস্থিতি এবং সুবিচার পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক আশ^স্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সহ সকল শিক্ষক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অভিযুক্ত সভাপতির উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনি বিদ্যালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে শৈলকুপার সার্কেল এএসপি তারেক আল মেহেদী ও শৈলকুপা থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকগন ও বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তখন সকল শিক্ষক ও উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

তারা জানায় শুধু এই ঘটনায় নয় এর আগেও বিদ্যালয়ের সভাপতি বেশ কয়েক বার একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর সহ শিক্ষকদের লাঞ্চিত করে। কিন্তু পুর্বে কেউ তার ভয়ে কখনো মুখ খোলেনি। প্রধান শিক্ষকসহ চার জন সহকারী শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনা সহ বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার নং ১৮, তারিখ ২৫/০৪/২০১৮ খ্রিঃ, ধারা- দন্ডবিধি ৪৪৮/৩৩২/৩৮৫/৩৫৩/৪২৭/১০৯/৫০৬। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ উসমান গনি ২৫ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিঃ তারিখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাদাবি সহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণ পায়।

তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শৈলকুপা, ৩১/০৫/২০১৮ খ্রিঃ তারিখের স্মারক নং ০৫.৪৪.৪৪৮০.০০০.১২.০১৬.১৭-৪৬৫ (যুক্ত) মোতাবেক যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর বিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সভাপতির অপসারণের সুপারিশ সহ প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সভাপতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যশোর শিক্ষাবোর্ড। প্রধান শিক্ষক বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিদ্যালয় পরিদর্শকের নিকট বারংবার ধরনা দিলেও কোন কাজ হয়নি। আর এই কারনে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষক কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছে। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।