রায়পুরে দেশিয় প্রজাতি মাছের আকাল
মো: আবদুল কাদের,রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু দিনে দিনে কমছে নদী-নালা, খাল-জলাশয়ে দেশিয় মাছ! এরই মধ্যে যে সকল নদী কিংবা খাল রযয়েছে তাও আবার বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিকেলের বর্জে দূষিত হচ্ছে! ফলে দেশিয় প্রজাতির মাছের বংশ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও নদী থেকে এক সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু প্রাকৃতিক আবাসভূমি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এ সব মাছের অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- চ্যাপিলা, চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, ভেদা, শিং, কৈ, টাকি, শোল, ফলি, চেলি, মলা, ঢেলা, কানপোনা, বাটা, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, ছোটচিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইন, তারা বাইন, দেশি জাতের পটকা, বেলেসহ নাম না জানা অনেক প্রজাতির দেশিয় মাছ। এ সব ছোট মাছের উৎস ছিল- হাওর, বাওড়া, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ও বিভিন্ন নদী-নালা।
জেলার সদর উপজেলা, রায়পুর উপজেলা, রামগঞ্জ উপজেলা, কমলনগর উপজেলা এবং রামগতি উপজেলার বিভিন্ন হাওড়া-বাওড়া জলাশয় ছাড়াও মেঘনা নদী, ডাকাতীয়া নদী থেকে এক দশক আগেও প্রতিদিন জেলার ছোট বড় বিভিন্নবাজারে দেশিয় জাতের পর্যাপ্ত ছোট মাছ দেখা যেতো। আবার এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদী দখল আর দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব প্রায় বিলীন
হয়ে গেছে। চাহিদা থাকা সত্বেও ক্রেতারা এখন আর আগের মতো এ জাতীয় দেশিয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রায়পুর উপজেলার কাজীর দীঘির পাড় বাজারের হাসান কনফেকশনারি প্রোঃ আলী হোসেন বলেন, কোনো রকম চাষ ছাড়াই আমাদের গ্রামের জলাশয়ে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো ও বাজারগুলোও ভরে যেতো দেশিয় মাছে। কিন্তু এর বিপরীতে দেখা যায়; জলাশয়ের অধিকাংশ এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিত্যনতুন স্থাপনা, নতুন নতুন ঘর-বাড়ি নির্মাণ করার কারণে
জলাশয়ের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। মৎস্য চাষী মো. মনির মোল্লা জানান, ছোট জাতের দেশিয় মাছের সরবরাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। দুটি কারণে ছোট মাছের চালান কমে গেছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, উৎপাদন কমে যাওয়া। কিন্তু উৎপাদন চেয়ে বেড়ে গেছে স্থানীয়দের দেশিয় মাছের চাহিদা।
জেলার মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই অনেক দেশিয় মাছ বিলুপ্ত হয়েছে কিংবা বিলুপ্তির পথে। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, জলাভূমির সঙ্গে বিশেষ করে হাওর-বাওড়া ও বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, প্লাবন ভূমির সঙ্গে সংযোগ খাল ভরাট, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানি প্রবাহ
কমে যাওয়া। অন্যদিকে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজজন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস্#৩৯;সহ ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার। তাই দেশিয় প্রজাতির এ সব সুস্বাধু ও পুষ্টিকর মাছ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের অনতিবিলম্বে নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করেন এ অঞ্চলের সর্বসাধারণ।