রায়পুরে গ্রামার ও গাইড বইয়ের বাণিজ্য

লক্ষ্মীপুুরের রায়পুর উপজেলার মাধ্যমিক, প্রাথমিক স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে চলছে নিষিদ্ধ গ্রামার এবং গাইড বইয়ের জমজমাট বাণিজ্য। উপজেলার তৃতীয় শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব গাইড, বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ কিনতে বাধ্য হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির অসাধু শিক্ষকরা পুঁথিনিলয়, স্পন্দন, পূঁথিপত্র, লেকচার, জুপিটর, দিগন্ত প্রকাশনীর সংস্থার সঙ্গে গোপন চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের পছন্দ অনুযায়ী গাইড ও ব্যাকরণ বই পাঠ্য করছে। বিনিময়ে তাদের মিলছে নগদ অর্থ্#৩৯;সহ নানা উপঢৌকন।
জানা যায, উপজেলায় ৩১ টি মাধ্যমিক, ২০টি মাদ্রাসা, ১২৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭০টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই অবাধে চলছে এ ধরনের বাণিজ্য। রায়পুর পৌর শহরের রায়পুর মার্চ্চেন্টস একাডেমি, বালিকা বিদ্যালয়, এল.এম. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষকরা নিষিদ্ধ গাইড ও ব্যাকরণ বই যাচাই-বাছাই না করে শিক্ষার্থীদের কিনতে নির্দেশনা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ভালো-মন্দের তফাৎ না বুঝে অভাব-অনটনের মাঝেও সন্তানদের মুখের দিতে তাকিয়ে শিক্ষকদের নির্দেশ মান্য করে দেদারছে কিনছে এসব বই। সরকার বিগত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি গ্রামার ও ব্যাকরণ বই বিনামূল্যে প্রদান করছে। কিন্তু উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের হাতে অন্যান্য বইযয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত গ্রামার, ব্যাকরণ ও গাইড বই রয়েছে।
একইভাবে উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, মাদ্রাসা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিধি নিষেধের পরেও শিক্ষকদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে গাইড বই দেদারছে কেনাবেচা চলছে। অনেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে মূল পাঠ্যবই না নিয়ে গাইড বই নিয়ে ক্লাসে যেতে দেখা গেছে। জানা গেছে, প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এস র্আ#৩৯;দের মাধ্যমে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা সমিতি, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের কমিশন্#৩৯;সহ বিভিন্নভাবে তাদের প্রকাশনীর বই বাজার জাতের জন্য চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের হাতে টোকেন বা মৌখিক নির্দেশনা দেন। উপজেলার সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও মাদ্রাসায় বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোপন চুক্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। রায়পুর মার্চ্চেণ্টস্ধসঢ়; একাডেমির প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকারি ইংরেজি ব্যাকরণে ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে বাংলা অনুবাদ থাকলে গ্রাম পর্যায়ে প্রকাশনীগুলোর নিষিদ্ধ বইয়ের প্রভাব রাস পেত।
নাম না প্রকাশে ইচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক এসব বাণিজ্যের বিষয়ে স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। অনেকেই অস্বীকার করতে চাইলেও তারা সাধু পুরুষ নন। তিনি এসব গাইড বইয়ের ব্যাপারে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সরকার বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি গ্রামার ও ব্যাকরণ বই দিচ্ছে। তারপরও কেন স্কুলগুলো গ্রামার ও ব্যাকরণ বই পাঠ্য করছে তা বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত করে মাসিক মিটিংয়ে উপস্থাপন করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার মানোয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে। কেউ যদি শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রাণী রায় বলেন যারা গাইড বিক্রয় করে, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কিনতে অনুরোধ করে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেআইন গত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।