প্রধান মেনু

রাশিয়ার মস্কোয় গতকাল বিশ্বকাপ ফুটবলের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন —এএফপি

স্টাফ রিপোর্টারঃ অপেক্ষার দীর্ঘ মুহূর্ত শেষ হলো। মাঠে মঞ্চস্থ হলো ইতিহাসের সেই সোনালি সোপান। তার আগে সবুজ গালিচার ওপর স্বেচ্ছাসেবক দল বিছিয়ে দিল সাতরঙা ব্যানার। মঞ্চে এলেন রবি উইলিয়ামস। ‘লেট মি এনটারটেইন ইউ’ গানের তালে তালে মহাচিৎকারে জেগে উঠল যেন ঘুমন্ত নগরী। জানান দিল শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপ। এ মহাচিৎকারে এক নিমেষেই দূর হয়ে গেল সব ক্লান্তি। ফুটবল জাগিয়ে দিল পুরো দুনিয়াকে। আগামী এক মাস ফুটবল জ্বরে কাঁপতে থাকবে সবাই। কোনো ওষুধ নয়, ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালই কেবল থামাতে পারে এই জ্বর।
সংক্ষিপ্ত সংগীত পরিবেশন করে নিজের দল নিয়ে সীমানার বাইরে চলে গেছেন রবি উইলিয়ামস। কিন্তু ও কী! ময়ূরপঙ্খিতে চড়ে ধবধবে সাদা পোশাকের ওই পরী এলো কোত্থেকে! লাল রঙা ময়ূরপঙ্খিতে চড়েই অপেরা গাইতে এলেন আইডা গ্যারিফুলিনা। জনপ্রিয় রুশ শিল্পীকে দেখেই পুরো স্টেডিয়াম গর্জে উঠল। আইডার সঙ্গে যোগ দিল রাশিয়ার জিমন্যাস্টিকস দল। নেচে-গেয়ে ফুটবল উন্মাদনা ছড়িয়ে দিলেন তারা। এরপর আবারও রবি উইলিয়ামস। ‘লিভ ইট আপ’ গানের তালে তালে আবার নেচে উঠলেন ফুটবল দর্শকরা। মাঝখানে এলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনাল্ডো। বলে লাথি দিয়ে বিশ্বকাপটা মূলত উদ্বোধন করলেন দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই তারকাই। তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের এই অনুষ্ঠানটাও বড় দীর্ঘ মনে হচ্ছিল। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ? বলে লাথি পড়বে! খেলা শুরু হবে! বল দখলের লড়াই। গোলের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা। এসব হবে কখন? অপেক্ষার প্রহর শেষ করতেই যেন মাইক্রোফোনে এলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ‘আপনারা যারা এখানে আছেন, যারা ফ্যান জোন এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেখছেন— বহুজাতিক এই ফুটবল পরিবারের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।
গ্রহের সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্টকে স্বাগত জানাচ্ছি।’ পুতিনের ঘোষণা যেন জ্বলতে থাকা উনুনে তেল নিক্ষেপ করল। লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ৭৮ হাজার ১১ জন দর্শক সমস্বরে ঘোষণা করলেন ফুটবলের জয়গান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা শেষ হয়ে গেল সংক্ষিপ্ত সময়েই। তবে তুলনামূলক বিচারে এ অনুষ্ঠান ২০১০ কিংবা ২০১৪ সালকে ছুঁতে পারল কই! শাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ কিংবা ‘লা লা লা’ গানের সুরে যেমন মাতাল হয়েছিল ফুটবল দুনিয়া রবি উইলিয়ামসের ‘লিভ ইট আপ’ ততটা পারল কই! উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে তাই দর্শকদের খুদে একটা অংশ ‘বুয়া, বুয়া’ বলে চেঁচিয়ে ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু ওদের চিৎকার চাপা পড়ে রইল ফুটবলের জয়বেদির নিচে। ফাহদ আল ইয়াহিয়া সুদূর সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ৫ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার সাইকেলে চড়ে মস্কো এসেছিলেন দলের জয় দেখবেন বলে। তার স্বপ্নটা পূরণ হলো না। তবে ফুটবল এমনই। পাগলাটে অনেক কিছুই আছে যা মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে সারাটা সময়। এর কোনো অর্থ হয়তো একজন সাধারণ মানুষ বুঝবে না।
কিন্তু ফুটবলভক্তের কাছে অর্থহীন এমন পাগলাটে কাণ্ডটাই জীবনের পরমতম সম্পদ! এজন্যই বুঝি দৃপ্ত কণ্ঠে ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো বলে গেলেন, ‘ফুটবল রাশিয়া জয় করেছে। এবার পুরো দুনিয়া জয় করবে।’ ফুটবলের এ জয় হোক কল্যাণের। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলার সৌভাগ্যটা কাজে লাগাতে পারল না সৌদি আরব। স্বাগতিক রাশিয়া ম্যাচটা জিতে গেল ৫-০ ব্যবধানে।
বিশ্বকাপের প্রথম গোল করলেন ইউরি গাজিনিস্ক। ডেনিস চেরিসভ বদলি নেমেই গোল করে রাশিয়াকে এগিয়ে দেন ২-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও তিনটি গোল হজম করে সৌদি আরব। সৌদি আরবের পরাজয়ের ষোলকলা পূর্ণ করেন আরতেম জিওবা, চেরিসভ ও আলেকজান্ডার গলোভিন। ৫-০ গোলের দারুণ এই জয়ে স্বাগতিক রাশিয়া নকআউট পর্বের পথে নিজেদের অনেকটা এগিয়ে রাখল। সৌদি আরবের এই করুণ পরাজয়টা মাঠে বসেই দেখলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আলেকজান্ডার গলোভিনের ফ্রি কিক গোলটা দেখে ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো বিস্মিত হয়ে পুতিনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন দীর্ঘ কয়েকটা মুহূর্ত। অন্যদিকে তিনি যেন সৌদি প্রিন্সের দিকে তাকাতে লজ্জাই পাচ্ছিলেন। দাওয়াত দিয়ে এনে এভাবে কেউ খাতির করে নাকি! বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হলো রাশিয়া-সৌদি আরবের। প্রথম গোল করলেন ইউরি গাজিনিস্ক। আর্জেন্টাইন রেফারি নেস্তর পিতানাও তো কম ভাগ্যবান নন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি।