প্রধান মেনু

ম্যানেজিং কমিটির মিথ্যা অভিযোগে স্কুলছাড়া প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,২১আগষ্ট ২০২০ঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন। স্কুলের সময় হলেই যার ব্যস্ততা বেড়ে যেত, সকল কাজ ফেলে দিয়ে ছুটে যেতেন নিজের গন্তব্যস্থলে। এই কিছুদিন আগেও যার অফিস ছিল, অফিসে সাজানো টেবিল- চেয়ার ছিল যেখানে বসে করতেন নিয়োমিত অফিস। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান উন্নয়ন নিয়ে প্রতিদিন নানা পরিকল্পনা করতেন। কিন্তু এসবের কিছুই নেই এখন তার। আজ মিথ্যা অভিযোগে সেটি থেকেও বঞ্চিত তিনি। দীর্ঘ সময়ে প্রিয় প্রতিষ্ঠানটির দেখা না পেয়ে হতাশায় সময় পার করছেন তিনি।

জানা গেছে, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মিথ্যা অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিদ্যালয় যেতে চাইলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।২০১৭ সালের ৪ জুলাই প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, শিক্ষাদান, শিক্ষার মান-উন্নয়নসহ কাংক্ষিত রেজাল্ট পাওয়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। যোগদানের ১১ মাস পর ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান প্রধান শিক্ষক পদ না পাওয়ার কারণে কিছু কর্মচারী ও শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে দিলারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এমনকি টাকা আত্মসাৎ মামলাও দায়ের করেন।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অডিট টিম তদন্ত করে তার সত্যতা পায়নি। তারপরও থেমে থাকেনি সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমানের ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন। এর কয়েকদিন পর অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় দিলারা ইয়াসমিন বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ওই বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও কর্মচারী ১৭ দিন জেল হাজতে থাকার পর বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। এরই জের ধরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তৈয়বুর রহমান খান গত ২৮ জানুয়ারি রাতের আঁধারে পাশের একটি বিদ্যালয়ে মিটিং করে প্রধান শিক্ষককে সাময়কি বহিষ্কার করার আদেশ দিয়েছেন।

এরপর দিলারা ইয়াসমিন প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিতে কয়েকবার যেতেও চেয়েছেন, কিন্তু তাকে বারবারই লাঞ্ছিত করে ফিরিয়ে দেন তারা। অভিযোগের বিষয়ে কৈফিয়ত তলব, জবাবপত্র গ্রহণ, ব্যক্তিগত শুনানি ও আত্মপক্ষ সমর্থনের নিয়ম থাকলেও এসব নিয়ম উপেক্ষা করে কীভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তৈয়বুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আলাপকালে সুস্পষ্ট কোন অভিযোগ না করে ঢালাওভাবে বেশকিছু বক্তব্য তুলে ধরেন তৈয়বুর রহমান খান।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বলেন, দিলারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছেন। অভিযোগগুলোর কারনে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলায়ও রয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ের নানা সময়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। কত টাকা আত্মসাৎ এবং কোন কোন খাতে করেছেন জানতে চাইলে তিনি সুস্পষ্ঠ কোন তথ্য দিতে পারেননি। নানা প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেন বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে। তবে তিনিও কোন সুস্পষ্ঠ অভিযোগ দিতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন বলেন, আমাকে মিথ্যা অভিযোগে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষককে ৬০ দিনের বেশি সাময়িক বরখাস্ত করা যাবে না। অথচ বরখাস্তের প্রায় সাত মাস অতিবাহিত হলেও আজ ও আমি আমার প্রতিষ্ঠানে যেতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, সভাপতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান সভাপতি আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা আমাকে হয়রারির উদ্দ্যেশে কতগুলো মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি মামলাগুলোর হাজিরা দিচ্ছি। আমি এর সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এই বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান বলেন, দিলারা ইয়াসমিন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটির ফলাফল নিয়ে আমরা আশা করছি। বিষয়টির দ্রুত সমস্যা সমাধান করব।