প্রধান মেনু

মে দিবসে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মে দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“মহান মে দিবস শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। তাঁদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
১৮৮৬ সালের এ দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা আত্মাহুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেক দিকে শোষিত-আমি শোষিতের পক্ষে’। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা পোশাক শিল্পসহ ৩৮টি শিল্পখাতের শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরি ঘোষণা করেছি। শ্রমঘন গার্মেন্টস শিল্পখাতের শ্রমিকদের নি¤œতর মজুরি ৫ হাজার ৩ শত টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’ যুগোপযোগী ও আধুনিক করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা বিএনপি-জামাত জোট আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করেছি।
আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কার্যক্রম আরো সুদৃঢ় হয়েছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইন ২০১৩, সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, জাতীয় পেশাগত স¦াস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি প্রণয়ন করেছি। প্রায় ৫৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬২টি চা বাগানে কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।।
আমরা শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। এ তহবিলে ১২২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১০৯টি শ্রমিক পরিবারকে
১ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। শিল্পকারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে সার্বিক নিরাপত্তা সন্তোষজনক রাখার লক্ষ্যে মানসম্মত ও যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছি।
আমাদের এসকল উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সুফল শ্রমজীবী সমাজ পেতে শুরু করেছে। আমরা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
আমি আশা করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরো নিবেদিত হবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সক্ষম হব।
আমি মে দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

 

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মে দিবস উপলক্ষে নি¤েœাক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান ‘মে দিবস’ পালনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। দিবসটি উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবময় দিন। কর্মঘন্টা নির্ধারণসহ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হে মার্কেটে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিক সংগঠনের যে বিজয় সূচিত হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে বিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। এ জন্য উৎপাদনশীলতা ও শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করণসহ সুস্থ শিল্পসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জন্য শোষণমুক্ত, মর্যাদাসম্পন্ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় শ্রম আইন সংশোধন, যুগোপযোগী শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। এছাড়া তাদের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়ন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে।
সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে শ্রমিক-মালিকের বিদ্যমান আন্তরিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একথা অনস্বীকার্য যে, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে শিল্পোদ্যোক্তা, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্তভাবে কাম্য। সকল পক্ষের ইতিবাচক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রম ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
মহান মে দিবসের সাথে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার, স্বার্থ ও কল্যাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সকলে এগিয়ে আসবেন, মহান মে দিবসে এ প্রত্যাশা করি।
মেহনতি মানুষের জয় হোক-মহান মে দিবসে এ কামনা করি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”