মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে পুনর্বার বৈঠক
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে ১২ ডিসেম্বর পুনর্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিবৃতি দেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রি ফেল্টম্যান। মিয়ানমার বিষয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণ ছিল নিরাপত্তা পরিষদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ যা সুনির্দিষ্টভাবে এই পরিষদে গৃহীত দলিল হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। নিরাপত্তা পরিষদের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেন সভায় বক্তৃতা করেন।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত ভয়াবহ যৌন সহিংসতার যে বাস্তব চিত্র নিজ চোখে দেখেছেন এবং নির্যাতিত নারী ও শিশুদের যে বক্তব্য শুনেছেন তা সভায় তুলে ধরেন। প্যাটেন বলেন, যারা এখনও যৌন সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন এবং যারা নিষ্ঠুরতম এই যৌন সহিংসতার দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন, তাদের সকলেই বলেছেন, নারকীয়ভাবে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা ধর্ষণ, গণধর্ষণ, জনসম্মুখে বিবস্ত্রকরণ এবং সেনাক্যাম্পে আটক রেখে দিনের পর দিন রোহিঙ্গা নারীদের যৌনদাসত্ব গ্রহণে বাধ্য করার মতো জঘণ্য কাজগুলো করেছে।
আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রি ফেল্টম্যান মিয়ানমার সঙ্কটের সমাধানে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: রাখাইন স্টেটের অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশমালাকে ভিত্তি ধরে শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা; প্রত্যাবাসন হতে হবে উচ্ছেদকৃতদের মূল ভূমিতে বা পছন্দনীয় কাছাকাছি কোনো স্থানে; অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা থাকতে হবে যাতে তারা জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনগুলো সংস্থান করতে পারে; প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদ- উদারভিত্তিক হওয়া এবং সকল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে।
সভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১শ’-৪শ’ জন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। তিনি সম্প্রতি উত্তর ও মধ্য রাখাইন প্রদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়িতে অগ্নিকা-ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ চুক্তির শর্তানুযায়ী শীঘ্রই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে এবং মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে।
তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক দুর্দশার যে মূল কারণ তা দূর করতে এতদসংশ্লিষ্ট বহুবিধ বিষয় ও অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ রোহিঙ্গাদের অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বরাবরের মতো বিশ্ব সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।