মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী তথ্যনির্ভর নয়, ভুল চশমায় ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে বাংলাদেশকে
সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১৬ এ বাংলাদেশ বিষয়ে বর্ণনাকে তথ্যনির্ভর নয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
আজ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনটি তথ্যনির্ভর নয়, বাংলাদেশকে ভুল চশমায় ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথিবীর সকল দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর প্রতি বছর পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের ঢালাও মন্তব্য প্রদান, আমরা নীতিগতভাবে সমর্থন করি না। সর্বশেষ তারা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ তা যথাযথ তথ্যনির্ভর নয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখার বিষয়ে তাদের চশমাটা ভুল, দেখার চোখটাও ঝাপসা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধান ও আইন দ্বারা পরিচালিত। দেশের সব সংস্থাই সংবিধান ও আইনের পাশাপাশি সংবিধিবদ্ধ বিধি-প্রবিধি-নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত। সুতরাং আইন বহির্ভূত কোন কাজ করার সুযোগ সরকার বা সংস্থা কারোই নেই, কোথাও এর অন্যথা হলে, আইনি প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থাও সংবিধান দ্বারা সুসংরক্ষিত।’
প্রতিবেদনে জঙ্গি তৎপরতার বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের উল্লেখের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পায়নি, বরং সরকারের শূন্যসহিষ্ণু নীতিতে জঙ্গি সন্ত্রাস কমে এসেছে। গুটিকতক জঙ্গি সন্ত্রাসীরা এখানেই গড়ে ওঠা ও এখানেই অশান্তির অপপ্রয়াসে লিপ্ত। এদের সাথে আন্তর্জাতিক সংযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর এ পর্যন্ত যে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিটিতেই জঙ্গিরা বিফল হয়েছে, পালাতে পারেনি, নির্মূল হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার চাইতে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বেশি সফল।’
জঙ্গি দমনের কাজে কোনো সামাজিক বা নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করা হয়নি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সংবিধানে দেয়া কোনো অধিকার খর্ব করাকে সমর্থন করে না। একইভাবে বিচারবহির্ভূত যেকোন হত্যাকেও সরকার বা আইন সমর্থন করে না। সন্ত্রাসীদের সাথে সম্মুখ সংঘর্ষে কেউ নিহত হলে তাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বলা সঠিক নয়।
এ সময় প্রতিবেদনের অন্যান্য বিষয়ের ওপরে মন্তব্য করতে গিয়ে ইনু বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়াই সরকারের নীতি। দেশের পোশাক শিল্প এখন আন্তর্জাতিক মানদ-ে পরিচালিত, শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ পরিবেশ পাচ্ছেন। দেশের গণমাধ্যমও নজিরবিহীন বিকাশ লাভ করেছে। কিন্তু জঙ্গি সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা, চরিত্র হনন বা হলুদ সাংবাদিকতা কখনই সাংবাদিকতা নয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া ছাড়া কখনই ইন্টারনেটের কোনো সাইট সাময়িক বন্ধ ছিল না। এনজিও পরিচালনার ক্ষেত্রেও নূতন কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হয়নি।’
সম্মেলনের সমাপ্তিতে দু’দেশের সহযোগিতামূলক মনোভাবের কথা ব্যক্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয়েই গণতান্ত্রিক দেশ। উভয় দেশই বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন বিশ্ব বিষয়ে একসাথে অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে দু’দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নততর করার প্রয়াসই আমাদের লক্ষ্য।’
#
আকরাম/আলমগীর/সঞ্জীব/জয়নুল/২০১৭/১৮১০ঘণ্টা