প্রধান মেনু

মানিকগঞ্জে ফসল ও মাটিতে বায়োচারের ব্যবহার

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতাঃ মানিকগঞ্জ জেলাধীন শিবালয় উপজেলায় স্থানীয় গৃহিণীদের দ্বারা উৎপাদিত বায়োচার ব্যবহার করে ফসল ও মাটিতে বায়োচারের কার্যকারিতা পরীক্ষণ করা হচ্ছে। আই.সি.সিও এর অর্থায়নেএবং সিসিডিবির বায়োচার প্রকল্পের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষিবিশ^বিদ্যায়ের মৃত্তিকা ও বিজ্ঞানবিভাগের অধ্যাপক মোঃ মিজানুর রহমান এর তত্বাবধানে একই বিভাগের দুইজন গবেষক মোঃ মন্জুর মোর্শেদ উদয় এবং মোঃ মোজাম্মেল হক স্থানীয় একদল উৎসাহী চাষিদের নিয়ে হাতে কলমেএই পরীক্ষা করছেন। বায়োচার হচ্ছে এক ধরনের চার বা কয়লা যাতে রয়েছে একাধিক গুনাবলী যেমন, বায়োচার মাটির জৈব গুনাগুন বৃদ্ধি করে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়, মাটির পানিধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, সারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়, মাটির অম্লত্ব দূর করতে সাহায্য করে, মাটিতে অবস্থানকারী বিভিন œঅনুজীব কেসক্রিয় করে তোলে। বায়োচার মাটিতে শতশত বছর পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম।
মাটিতে যেখানে জৈব উপাদান বা জৈব গুনাগুন থাকা প্রয়োজন শতকরা ৫ভাগ, সেখানে শিবালয়ের ১২ জন কৃষকের মাটি ”মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট” থেকে পরীক্ষা করে তা পাওয়া গেছে শতকরা ১ভাগ, কোথাও ১ভাগের কম আবার কোথাও ১ভাগের সামান্য কিছু বেশী (দুইভাগের কম)। মাটির এই জীণর্ দশা ফিরিয়ে আনতে সিসিডিবি- ইলাগসই প্রযুক্তির উদ্যোগ নেয়। কৃষি ও সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়নের এবং এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য জোরালো ও নিরলসভাবে কাজ করছেন সিসিডিবির ডেভেলপমেন্ট পলিসি এ্যাডভাইজার এবংবায়োচার প্রজেক্ট এর টিমলিডার এম মাহাবুবুল ইসলাম, যার ফল স্বরুপ তিনি (কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জুলিয়ান এর সমন্বয়ে) আবিস্কার করেন আখা (কৃষি বান্ধব চুলা) যাতে রান্নার পাশাপাশি উৎপাদিত হয় বায়োচার নামক এই মূল্যবান বস্তু যা পৃথিবীরউন্নয়নশীল দেশে এক উজ¦ল দৃষ্টান্ত।
গবেষকগন শিবালয় এলাকার ৪জন কৃষকের মাটি ও ৪টি ফসলের উপর গবেষনা করছেন। কৃষকগনের মধ্যে ছোটকুষ্টিয়া গ্রামের কৃষক আজমত এরজমিতে বেগুন, দশচিড়া গ্রামের কৃষক রবীন্দ্র কুমারএর জমিতে ফুলকপি, মৃত্যুঞ্জয় এর জমিতে মরিচ এবং পরিতোষ সাহা এর জমিতে টমেটোর উপর গবেষনা করা হচ্ছে। গবেষনামূলক প্রতিটি ফসলে গবেষকদের সাথে স্বেচ্ছায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন ৪জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি করে স্থানীয় কৃষকদল। গবেষকগণ চারজন (আজমত, রবীন্দ্র, মৃত্যুঞ্জয়, পরিতোষ) কৃষকের মাটি ও ফসলে ৫টি পরীক্ষণ ও প্রতিটি পরীক্ষণের ৩টি করে মাত্রা ব্যবহার করে পরীক্ষণ পদ্ধতি পরিচালনা করছেন। এতে প্রথম পরীক্ষণে শুধুমাটি, দ্বিতীয় পরীক্ষণে শুধু রাসায়নিক সার, তৃতীয় পরীক্ষণে রাসায়নিক সার ও বায়োচার ১টন/হেক্টর, চতুর্থ পরীক্ষণে রাসায়নিক সার ও বায়োচার ৩টন/হেক্টর এবং প ম পরীক্ষণে রাসায়নিক সার ও বায়োচার ৫টন/হেক্টর ব্যবহার করে পরীক্ষাকরছেন। মাটি পরীক্ষার জন্য চারা রোপনের পূর্বে তারা প্রত্যেক কৃষকের জমির মাটি সংগ্রহ করেছেন এবং ফসল সংগ্রহ করার পর আবার ও পরীক্ষার জন্য মাটি সংগ্রহ করবেন। পরীক্ষণ শেষে মাটিতে কোন ফসলের জন্য কি পরিমান বায়োচার কার্যকর হবে তা জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন গবেষকগণ।
ইহা ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় বায়োচার নিয়ে গবেষনা করছেন। শিবালয়উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা জানান-মাঠ পর্যায়ে বায়োচার ব্যবহার অত্যন্ত স্বার্থক ও সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে আরও উন্নত পর্যায়ে এর বিস্তৃতি ঘটলে কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে তিনি মনে করেন।